Discover millions of ebooks, audiobooks, and so much more with a free trial

Only $11.99/month after trial. Cancel anytime.

Ravan
Ravan
Ravan
Ebook319 pages2 hours

Ravan

Rating: 5 out of 5 stars

5/5

()

Read preview

About this ebook

In the Ramayana, Ramachandra won the battle and freed Sita from Ravana, but he could not give the honor of the woman, the dignity of the wife. And Sitamata had to enter the abyss with that insult
Although the name of our story is Ravana, it is never inspired by Ramayana Here the character is inspired by Ravana's heroism or prowess Our story stands on the dignity of women and the dignity of wives Love is the name of life, in everyone's life, and in the corner of everyone's mind there is some love, affection, anger or injustice. This story reveals that eternal truth, because ..
                              "Everyone's life can tell some story"

LanguageEnglish
Release dateSep 26, 2020
ISBN9781393143499
Ravan
Author

Swagatam Sengupta

Swagatam Sengupta is a fiction writer. His novels are published 200+ countries all over the world. A Kolkata based writer has given us so many thrillers like Rik, The Chastisement, The Chastisement2, Feral Funeral and many more. His every thrillers are unique and based on our daily life. He is too much related with our practical and daily life and he plays his words with our emotions and feelings.

Read more from Swagatam Sengupta

Related to Ravan

Related ebooks

Sagas For You

View More

Related articles

Reviews for Ravan

Rating: 5 out of 5 stars
5/5

1 rating1 review

What did you think?

Tap to rate

Review must be at least 10 words

  • Rating: 5 out of 5 stars
    5/5
    Unbelievable romantic thought, great emotional touch, can't resist your tears, author proved.. Ravan is Ravan.

Book preview

Ravan - Swagatam Sengupta

এই কাহিনী তাদের জন্যে যারা সম্পর্ককে ভালোবাসে, সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয় |||

১.

চারিদিকে ভয়ঙ্কর প্রলয় | মাত্র সাতদিন আগের কথা, কেউ ভাবতেও পারেনি এরকম এক ভয়ঙ্কর সময় দেখবে মানুষ | একটু বৃষ্টির অপেক্ষা নিয়ে যে চাষির বৌ পুজো দিয়েছিলো মন্দিরে, রোদ্দুরে ঘুরে ঘুরে কাজ করা শ্রমিকের মা একটু বৃষ্টির প্রার্থনা করেছিল, আর নদীতে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেনীটা স্বপ্ন দেখেছিলো বসার জলে আসবে কত মাছ তাদের সুখের আর আনন্দের সংবাদ নিয়ে, সেই বৃষ্টি নিয়ে এসেছে প্রলয় | সেই ভয়ঙ্কর বৃর্ষ্টি আকার নিয়েছে বন্যার, নদীর জল ঢুকে গেছে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে, নষ্ট করেছে ক্ষেত, শূন্য করেছে মায়ের কোল, ভাসিয়ে নিয়ে গেছে কত সংসার আর ভাসিয়ে নিয়ে গেছে কত স্বপ্ন | আজ তাদের চোখের জল মিশে গেছে বন্যার জলের সাথে , যার স্বাদ বড়োই তিক্ত, যার অনুভূতি বড়োই ভয়ের, আতঙ্কের আর তারসাথে বড়োই বেদনার |

রাজ্যের সরকারের সাথে সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছে অনেক প্রতিষ্ঠান, কেউ ধর্মীয়, যারা বিদেশী বিনিয়োগের মাধ্যমে সাহায্য করছে কেউ কর্পোরেট সংস্থা , নিজের ট্যাক্স বাঁচানোর জন্য , আবার NGO সংস্থাগুলো এসেছে তাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে | চারিদিকে সব অসহায় মানুষের হাহাকার, ঘর বাড়ি সব ভেসে গেছে, না জানে কোথা থেকে ভেসে আসছে কারো গোটা সংসার, কারো জীবিকা আর তারসাথে ভেসে আসছে কত মৃতদেহ | পশু পাখির সাথে মানুষের পাশাপাশি পরে থাকা মৃতদেহ যেন আজ বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছে , সভ্যতার অহংকার থেকে একবার বেরিয়ে এসে দেখো, তোমার পরিচয়ের এটাই বাস্তব, তুমিও একটা পশু | সত্যি প্রকৃতির কাছে সবাই কত অসহায় |

কলকাতার অনেক বড়ো বড়ো কোম্পানি এইসময়ে তাদের বিভিন্ন লোকজন পাঠিয়েছে এই বন্যাকবলিত গ্রামগুলোতে সাহায্য বা যাকে বলে ত্রাণ দিয়ে সাহায্য করতে | বন্যা কবলিত এলাকা থেকে একটু দূরে সরকারি ক্যাম্পগুলো গড়ে উঠেছে, সেখান থেকেই সমস্ত ত্রাণের কাজগুলো করা হচ্ছে | সেই ক্যাম্পগুলোতে মজুত করা হয়েছে জামাকাপড়, খাবার , ওষুধ সমস্ত কিছু | সেই ক্যাম্পেই আজ প্রায় তিনদিন ধরে তার টিমের ছেলেদের সাথে হাতে হাত লাগিয়ে কাজ করে যাচ্ছে অয়নিকা | একটু পরিচয় করিয়ে দেওয়া দরকার | অয়নিকা বসু, কলকাতার একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে কাজ করা এক উচ্চপদস্থ কর্মচারী | এক মহিলা হিসেবে এই কাজে আসতে তাকে মণ করেছিল, তার পরিবার এমনকি অফিস থেকেও, কিন্তু কোনো কথা শোনেনি অয়নিকা | কেন যেন ওই বন্যাকবলিত মানুষগুলোর অসহায় চেহারা, তাকে ঘরে বসতে দেয়নি | সে পারেনি আর দশজনের মতো টেলিভিশনের মধ্যে খবর শুনে আর লাইভ টেলিকাস্ট দেখে শুধু দুঃখপ্রকাশ করে দিন কাটাতে | তাই কোম্পানির টিমের সাথে সে নিজেও নেমে পড়েছে সেই অসহায় মানুষগুলোর পাশে |

কোম্পানি এবার নতুন টীম পাঠিয়েছে , কিন্তু অফিসে অয়নিকার দরকার একটু বেশিই হয়ে পড়েছে, তাই অফিস থেকে জরুরি অবস্থা দেখিয়ে বলা হয়েছে যেন তাড়াতাড়ি ফিরে আসে | অয়নিকা তার বাকি ছেলেদের সব কাজ বুঝিয়ে আবার বাড়ি ফিরছে আজ | ক্যাম্প থেকে গাড়ি নিয়ে বেরোতে বেরোতে একটু সন্ধ্যেই হয়ে গেলো |টিমের ছেলেরা বললো যে আজ অন্ধকার চারিদিক , বন্যার জন্য রাষ্টের সমস্ত বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন, পরেরদিন যেন সে যায়, কিন্তু অয়নিকা শুনলো না | ড্রাইভারকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো, বললো চারঘন্টার পথ , ঠিক পৌঁছে যাবে |

অয়নিকা গ্রামের রাস্তা ধরে গাড়ি নিয়ে চলেছে, ড্রাইভারটা খুব ভালো, গাড়িটা চালায়ও ভালো | চারিদিকে ভয়ঙ্কর কালো অন্ধকার, গাড়ির সামনের হেডলাইটের আলোতে রাস্তা দেখে গাড়ি চলছে | ড্রাইভার বললো অয়নিকাকে ম্যাডাম, এতরাতে না বেরোলেই পারতেন, একেবারে ভোরবেলা বেরোতেন, আমি ঠিক চলে আসতাম |

অয়নিকা নিজের ঘড়িটাতে সময় দেখে নিয়ে বললো সবেমাত্র আটটা বাজে, তোমার মনে হচ্ছে এতো রাত ? খুব বেশি হলে একটা বাজবে, ঠিক পৌঁছে যাবো |

ড্রাইভার বললো এটা শহর না ম্যাডাম, এটা গ্রাম, এখানে সন্ধ্যে নাম মানেই রাত, তারপর এই দুর্যোগময় অবস্থা |

অয়নিকা হেসে বললো তুমি আমাকে সাবধান করছো না ভয় দেখাচ্ছ ? আমার মনে হচ্ছে তুমি সবচাইতে বেশি ভয় পেয়ে আছো |

ড্রাইভার বললো আপনার খুব সাহস ম্যাডাম, এরকম দেখা যায়না খুবএকটা|

অনেকক্ষন ধরে অয়নিকার বাড়ি থেকে ফোন আসছিলো, কিন্তু যখন ধরছে তখন হয় শোনা যাচ্ছে না আর তা নয়তো ফোনটা কেটে যাচ্ছে খালি বারবার | খুব বিরক্তির সাথে মেসেজ করার চেষ্টা করছে কিন্তু সেটাও যাচ্ছে না | অয়নিকা অবশেষে হারমেনে নিলো পরিস্থিতির কাছে | গাড়ির জানালা দিয়ে একটা ভিজে হাওয়া এসে পড়ছিলো তার মুখে, চুলগুলো বারবার মুখের কাছে এসে ভীষণ বিব্রত করছিলো, তাই দুটো হাত দিয়ে পেছন দিকে চুলটা বেঁধে নিলো |

প্রায় ঘন্টা খানেক ধরে চলছে গাড়িটা | রাস্তার অবস্থা সত্যি ভীষণ খারাপ, কোথাও কোথাও এমনভাবে গর্তের মধ্যে পড়ছে যেন মনে হচ্ছে উল্টে পড়লো বলে গাড়িটা এবার | বেশকিছুটা পথ যেতে যেতে হটাৎ গাড়িটা খুব জোর একবার ঝাকিয়ে উঠলো, অয়নিকা গাড়ির মধ্যেই সেই ঝাঁকুনির জন্য তার মাথাটা জানালাতে গিয়ে খুব জোর একটা ঠোকা খেলো | অয়নিকা রেগে ড্রাইভারকে কিছু বলতে যাবে , আচমকা গাড়িটা সোজা পথভ্রষ্ট হয়ে পাশের একটা গাছে গিয়ে সজোরে ধাক্কা খেলো | ড্রাইভারের মাথাটা গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে ঠুকে গেলো | ড্রাইভার মাথাতে হাত দিয়ে দেখলো যে রক্ত বেরোচ্ছে, কোনোরকমে পেছনে অয়নিকাকে দেখবার জন্য ঘুরে দেখলো পেছনের দিকের দরজাটা খোলা , আর সিটে অয়নিকা নেই | গাড়ির সাইরেনের আওয়াজ যেন রাতের সমস্ত নিস্তব্ধতাকে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে | ড্রাইভার গাড়ি থেকে কোনোরকমে নেমে এলো, তারপর গাড়ির পেছনদিকটা এসে দেখলো, একটু দূরে উপুড় হয়ে পড়ে আছে অয়নিকা | ড্রাইভার ছুটে গেলো তার কাছে | অয়নিকার সামনে ঝুকে তাকে সোজা করে ডাকতে থাকে ম্যাডাম ম্যাডাম বলে | অয়নিকার নাকের কাছে হাত দিয়ে দেখলো যে নিঃশ্বাস চলছে কিনা | একটু নিশ্চিন্ত হলো, না কোনো অসুবিধা নেই, বেঁচে আছে |

ইতিমধ্যে গাড়ির তীব্র সাইরেনের আওয়াজে আশপাশ থেকে বেশ কিছু লোকজন ছুটে এসেছে | কিছু লোক গাড়িটাকে দেখছে আর কিছুলোক চলে এসেছে অয়নিকার কাছে | ভিড়ের মধ্যে থেকে একজন বললো ড্রাইভারকে কি হয়েছে দাদা, উনি ঠিক আছেন তো ?

ড্রাইভার খুব ভয় পেয়েছিলো, তাই কাঁপাকাঁপা গলাতে বললো "হ্যাঁ, উনি বেঁচে আছেন, আসলে মাথাতে চোট পেয়ে অবশ হয়ে গেছেন, যদি একটু ওষুধের ব্যবস্থা বা হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া যায় |'

এবার ভিড়ের মধ্যে থেকে আরেকজন বললো এখানে ধরে কাছে ওসব কিছু নেই, যে একটা ছোট হাসপাতাল ছিল সেখানকার সব ডাক্তাররা এখন বন্যা ক্যাম্পে | তারপর বললো কিন্তু এই অন্ধকারে আপনারা আসছেন কোথা থেকে আর যাচ্ছিলেনই বা কোথায় ?

ড্রাইভার বললো ম্যাডাম কলকাতা ফিরছিলেন, এখানে তিনদিন ধরে বন্যাত্রান ক্যাম্পে কাজ করছিলেন |

তখন সেই ভিড়ের মধ্যে থাকা লোকটা বললো ঠিক আছে , তাও এতো রাতে আসা ঠিক হয়নি আপনাদের, এমনিতেই রাস্তার হাল ভালো না, তারমধ্যে এতো অন্ধকার |

এবার ড্রাইভার বললো দেখুন যা হবার তাতো হয়ে গেছে, এখন তাড়াতাড়ি কিছু ব্যবস্থা করুন দয়া করে, আমার ভয় লাগছে ম্যাডামকে নিয়ে, কিছু না হয়ে যায় |

ভিড়ের মধ্যে সবাই একেঅপরের সাথে আলোচনা করছিলো, আচমকাই এক প্রবীণ ভদ্রলোক বললো একটা কাজ করো, ওনাকে নিয়ে আশ্রমে চলো, ওখানে ঠিক একটা ব্যবস্থা হবে |

সঙ্গে সঙ্গে সবাই ওই ভদ্রলোকের সাথে একমত হয়ে গেলো, যেন এতক্ষন বিপদে পড়ে কারো মাথা কাজই করছিলোনা |

আশ্রমটা কাছাকাছির মধ্যেই ছিল, দুটো অল্পবয়স্ক ছেলে দৌড়ে গিয়ে একটা স্ট্রেচার নিয়ে এলো, তারপর তারপর অয়নিকাকে শুইয়ে সবাই মিলে নিয়ে এলো আশ্রমে | আশ্রমের ভেতরে একটা ঘরে রাখা খাটের ওপর শুইয়ে দিলো সবাই মিলে অয়নিকাকে | ঘরের এককোনে একটা মোমবাতি জ্বলছে | এক বয়স্ক মহিলা এসে দাঁড়াতেই ভিড়ের মধ্যে থাকা সেই প্রবীণ লোকটি বললো এখনো বেঁচে আছে, বাউলমোড়ের কাছে  এক্সিডেন্ট হয়েছে, দেখো একটু, জ্ঞান হারিয়েছে মহিলা |

মহিলাটি বললো ভাগ্য ভালো আপনাদের, ডাক্তারবাবু একটু আগে এসেছে ক্যাম্প থেকে | আমি ওনাকে ডেকে দিচ্ছি, আর গুরুদেবকেও ডাকছি | এইবলে মহিলা বেরিয়ে গেলো | সবাই এক অদ্ভুত নজর নিয়ে তাকিয়ে আছে অয়নিকার জ্ঞানহারা দেহটার দিকে | কিছুক্ষনবাদে এক ভদ্রলোক হন্তদন্ত হয়ে ঢুকলো , তারপর সবাইকে বাইরে বেরিয়ে যেতে বললো | অয়নিকার পাশে বসে হাতটা ধরে কিছুক্ষন দেখে মহিলাটিকে বললো এখনো বেঁচে আছে, তুমি কিছু ফার্স্ট এইড আর আমার ব্যাগটা নিয়ে এসো, তাড়াতাড়ি | তারপর ড্রাইভারের দিকে তাকিয়ে বললো তোমার ও তো ভাই মাথা দিয়ে রক্ত পড়ছে, বসো এখানে|

সবাই বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলো যে ডাক্তার দেখে কি বলে | কিছুক্ষনবাদে ডাক্তার বাইরে বেরিয়ে এসে বললো আপনাদের চিন্তার কিছু নেই, উনি ঠিক হয়ে যাবেন, আমি ওষুধ দিয়ে দিয়েছি, জ্ঞান আসতে সময় লাগবে, তবে ভয়ের কিছু নেই| আপনারা নিশ্চিন্ত মনে বাড়ি যেতে পারেন |

সবাই ফিরে যাবে বলে তৈরি হচ্ছিলো, আচমকা এক ভদ্রলোক এসে সামনে দাঁড়াতেই সবাই খুব ভক্তিভরে তার সামনে এসে দাঁড়ালো | এক শান্ত সৌম্য চেহারা, হেসে বললো আপনারা বাড়ি যান নিশ্চিন্তে, আশ্রমে যখন নিয়ে এসেছেন আর কোনো চিন্তা নেই |

ডাক্তার সেই ভদ্রলোকের সামনে এসে বললো আমি ওষুধ দিয়ে দিয়েছি, কাল সকালের মধ্যে আশা করি জ্ঞান এসে যাবে | তারপর আবার বললো আপনি কি গুরুদেব একবার এসে দেখবেন মেয়েটিকে ?

ভদ্রলোক মাথা নেড়ে ঘরে এসে ঢুকলো যেখানে অয়নিকা শুয়েছিল | ঘরের কোন থেকে মোমবাতিটা তুলে নিয়ে এগিয়ে এলো অয়নিকার দিকে, তারপর তারসামনে ঝুঁকে মোমবাতির আলোটা অয়নিকার মুখের সামনে ধরলো | জ্ঞানহীন অয়নিকার মুখের ওপর পড়ে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দিলো ভদ্রলোক| এক অবাক নজর যেন তারস্থির হয়ে গেলো চকিতে , তার চোখ থেকে একনিমেষে নেমে আসা  একটা ছোট্ট অশ্রুবিন্দু যেন আচমকা তার শব্দে পরিণত হলো, কাঁপা গলাতে বলে উঠলো অনু ! 

২.

সকালের জলখাবার আর দৈনন্দিন কাজের চাপ আর দশ দৈনন্দিন দিনের মতোই, আর সেই কাজ নিয়েই নাজেহাল অয়নিকা | শশুড়বাড়িকে সুখে রাখার প্রতিজ্ঞা নিয়ে ঠিক ছ'বছর  আগে এই রায় বাড়িতে পা রেখেছিলো সে | স্বামী কুন্তল রায় , তার জীবনের সমস্ত খুঁটিনাটি সবকিছুর দিকেই খোঁজ রাখে | বিয়ে করলে স্বামীদের কিছু দায়িত্ব এসে যায় , কারণ বিয়ের পরেরদিন সকালে সমস্ত বাড়ির লোককে সাক্ষী রেখে বলেছিলো তোমার ভাত কাপড়ের দায়িত্ব নিলাম , সেই দায়িত্বটা কুন্তল পালন করে চলে সমস্ত রকমভাবে | অদ্ভুত এই বিয়ের প্রতিটা নিয়ম, কেন যেন সব প্রতিজ্ঞার পেছনেই একটা ফাঁক রয়ে যায়, অয়নিকার আজ তাই মনে হয় স্বামীর দায়িত্বটা কি ভাত কাপড়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ? এই ভাত কাপড়ের দায়িত্বটা তো তার ভূমিষ্ট হবার দিন থেকে তার বাবা মা পালন করছিলো , তাহলে বিয়েটা কি আসলে দায়িত্বর হাত বদল খালি ?

অয়নিকার শশুরবাড়ি, মানে রায় বাড়ি, একটু বলে রাখা দরকার | অয়নিকার শাশুড়ি , কাকলি রায়, পেশাগতভাবে একজন অ্যাডভোকেট | কলকাতা থেকে মাত্র একঘন্টার পথ ট্রেন এ , হালিশহর | সেখানে একজন নাম করা অ্যাডভোকেট কাকলি রায় | সে এতো নাম করা কেন ? তার পেছনে কিছু কারণ আছে | হালিশহরের সমস্ত রাজনৈতিক নেতা , পুলিশ আর বড়ো বড়ো ব্যবসাদারদের সাথে তার একটু বেশি খাতির |  কারণ সবার সমস্ত অনৈতিক কার্যকলাপকে আইনের প্রলেপ দেওয়া তার কাজ | কাকলির স্বামী ছিলেন শক্তি রায় | শক্তি রায় একজন আর্মি অফিসার ছিলেন, অয়নিকার সাথে বিয়ের ঠিক বছরখানেক আগে উনি রায় বাড়ি ছেড়ে চলে যান| তার মৃত্যুর পর স্বামীর পেনশন আর নিজের পেশাগত রোজগারে যথেষ্ট অর্থবতী  কাকলি রায় |

বাবার পথ অনুসরণ করেই আর্মিতে যোগ দিয়েছিলো কুন্তল, কিন্তু সময়ের আগেই ভলেন্টিয়ারি রিটায়ারমেন্ট নিয়ে এখন নিজের ব্যবসা করছে | পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতবর্ষের বেশকিছু মিলিটারি ক্যাম্পের বিভিন্ন লোন আর ইনকাম ট্যাক্সের কাজ করে ভালোই রোজগার তার |

অয়নিকা কুন্তলের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী, কুন্তলের প্রথম পক্ষের স্ত্রী তার সংসার ছেড়ে চলে যায় | কাকলি তার ছেলের একাকিত্বের সঙ্গী খুঁজে দিতে বিয়ে দেয় অয়নিকার সাথে | অয়নিকা আর কুন্তলের বয়সের ব্যবধানটা একটু বেশি, কিন্তু তাতে তাদের বিবাহিত জীবনে প্রথম দিকে খুব একটা অসুবিধা ছিল না | কিন্তু কালচক্রে বয়সের ব্যবধান জায়গা নিয়েছিল সম্পর্কের ব্যবধানে | হয়তো চাওয়া পাওয়ার মাঝে একটা ব্যবধান বা অতৃপ্ততা থেকেই যায় | ওই যে বললাম, বিয়ের পরেরদিন কুন্তল বলেছিলো তোমার ভাত কাপড়ের দায়িত্ব নিলাম | অয়নিকার মনে আজ তাই একটাই প্রশ্ন , ভাত কাপড়ের চাহিদা ছাড়া আরো কিছু চাহিদা থাকে, সেটা কেন কেউ প্রতিজ্ঞা করায় না |

আজ প্রায় ছ ছয়টা বছর কেটে গেছে, এখনো তাদের কোলে কোনো সন্তান আসেনি | সন্তান আসেনি বলাটাও ভুল, তাদের বিয়ের ঠিক দু বছরের মাথাতে অয়নিকা সন্তানসম্ভবা হয়েছিল, কিন্তু সেইসময় রায়বাড়ির অসুবিধা ছিল বাড়িতে কোনো নতুন কাউকে আনাতে, তাই স্বামী আর শাশুড়ির একরকম জেদেই নিজের সন্তানকে পৃথিবীতে আনতে পারেনি অয়নিকা | অয়নিকার মনে আজ ও সেই যন্ত্রনা গুমরে গুমরে ওঠে | মা হবার ইচ্ছে আর পরিণতির মাঝখানে কোনএকটা অন্ধকারে যেন হারিয়ে গেছে তার মাতৃত্বের সত্বা |

কুন্তল ডাইনিং টেবিল এ বসে ব্রেকফাস্ট করছিলো, খুব তাড়াতাড়ি করে খেতে খেতে বললো আজ ফিরতে একটু দেরি হবে, আর আমার খাবার রেখে দিয়ো টেবিল এ চাপা দিয়ে, খেয়ে নেবো |

কাকলি সামনে বসেই খাচ্ছিলো একসাথে, কুন্তলের কথা শুনে বললো আজ কি কলকাতার দিকে যাচ্ছিস ?

ভুরু কুঁচকে কুন্তল বললো কেন ?

.. না, গেলে বলতাম কলকাতা থেকে আমার কিছু জিনিস আনতে দেবার ছিল, তোকে নিয়ে আসতে বলতাম|"

কুন্তল খুব রেগে গিয়ে বললো কাজে বেরোচ্ছি মা, বোঝার চেষ্টা করো| আর কোথাও গেলেই এটা আনতে হবে কি ওটা আনতে হবে, এইসব ধান্দাবাজিগুলো ছাড়ো |

কাকলি খুব ঠান্ডা মাথাতে বললো আমি আমার জন্যে কিছু আনার কথা বলিনি, অয়নিকার কিছু দরকারি জিনিস আনার ছিল, তাই বলছিলাম |

কুন্তল বললো অয়নিকার কিছু দরকার থাকলে আমাকে বলতো, তোমাকে মাঝখানে সালিশি করতে কে বলেছে|

অয়নিকা এতক্ষন চুপ করে দাঁড়িয়ে সব শুনছিলো, সে এবার অত্যন্ত বিরক্তির সাথে বললো প্লিজ, তোমরা থামো, আমার জন্যে কিছু আনতে হবে না, তুমি তোমার কাজে যাও, আমি আমার ব্যবস্থা করে নেবো |

কাকলি এবার উত্তেজিত হয়ে অয়নিকাকে বললো কেন ? কুন্তল কেন আনতে পারবে না ?

কুন্তল রেগে গিয়ে বললো কারণ আমি একটা কাজে যাচ্ছি, আর আমি কখন সব মেটাবো সেটা আমি জানিনা|

অয়নিকা বললো বললাম তো, তুমি যাও |

কুন্তল খাবারের টেবিল ছেড়ে উঠে গেলো, তারপর বেসিনে হাত ধুয়ে জুতো পড়তে শুরু করলো | তারপর বললো সবচাইতে বড়ো কথা হলো, আমি কলকাতা যাচ্ছি না, ঠিক উল্টোদিকে যাচ্ছি, কৃষ্ণনগর ক্যাম্পে |

একথা বলে কুন্তল ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো, কাকলি নিজের খাটের ওপর বসেছিল, কিছুক্ষন ধরে কুন্তলের বেরিয়ে যাওয়া পর্যন্ত দেখলো, তারপর অয়নিকার দিকে তাকিয়ে বললো ও যে কলকাতা যাচ্ছেনা , সেই কথাটা আগে বলে দিলেই তো আর এতো কথা আসে না, তাই না ? তুই বল |

অয়নিকা বললো ছাড়ো না, তুমি তো জানোই ওকে |

কাকলি বললো পুরো ওর বাপের মতো হয়েছে, না ঠিকভাবে সংসার করতে পারে, না কারো সাথে মিশতে পারে| বলে ঘাড়টা ঘুরিয়ে একটা বালিশ নিজের পায়ের ওপর রেখে বললো রূপকথা চলে যাবার পর , যদি আমি না তোকে দেখে আনতাম, তাহলে আজ পর্যন্ত আটকুঁড়ে রয়ে যেত ঢ্যাম্নার বাচ্চা|

Enjoying the preview?
Page 1 of 1