নিষিদ্ধার ভালোবাসা: এক অসামান্য গল্প কথা
()
About this ebook
প্রমোটারের বিদ্রোহ করার পর কি হয়েছিল ভূমিকার জীবনে?যার দরুন ওকে প্যায়ারী বিবি হয়ে উঠতে হলো?.এমনই অনেক মেয়েকে ও মুক্তির পথ দেখায়। .আর সেই ড্রেসটা কেন ও ওয়াশ করে না, সেই ড্রেস এ কার গায়ের আর পারফিউমের মিষ্টি গন্ধ লেগে আছে? কষ্টের মাঝেও ও কার গায়ের ঘ্রাণ অনুভব করতে থাকে চোখ বুজে!... কে সে?আর মুক্তি কি দিতে পারবে ও সবাইকে? পাবে কি শেষ দেখা, নিজের সেই আপনজনের! নিষিদ্ধ মেয়ের মনের রাজপুত্র কি আদৌ হবে ওর?
Related to নিষিদ্ধার ভালোবাসা
Related ebooks
মদে ভেসে যাওয়া একটা প্লট Rating: 0 out of 5 stars0 ratingsভালোবাসার নীল কলম Rating: 0 out of 5 stars0 ratingsদেশবিদেশের আরও উপকথা Rating: 5 out of 5 stars5/5Ravan Rating: 5 out of 5 stars5/5Readying Riley: A Much Needed Guide to Preparing Your Fur Baby for Your Human One Rating: 0 out of 5 stars0 ratingsBroken 2: The Fix Rating: 0 out of 5 stars0 ratingsWinklatsch: Let’S Dive into the World of Stories!!! Rating: 0 out of 5 stars0 ratingsTragedies of Modernity: Transitioning for Better Life Rating: 0 out of 5 stars0 ratingsBahurupiya Nawab Rating: 0 out of 5 stars0 ratingsTijori Ka Rahasya: Jasusi Dunia Series Rating: 5 out of 5 stars5/5তবু স্বপ্নেরা সমাহিত হতে হতে ভেসে যেতে জানে Rating: 0 out of 5 stars0 ratingsThe Seven Shades Rating: 0 out of 5 stars0 ratingsJackals of the Night Rating: 0 out of 5 stars0 ratingsSleep Stories: A Collection of Short Stories Rating: 0 out of 5 stars0 ratingsThe Half Child Rating: 0 out of 5 stars0 ratingsThe Vampire Blood Moon Rating: 0 out of 5 stars0 ratingsGhost Stories: John, Are You Down There? Rating: 0 out of 5 stars0 ratingsAkalMrityu Avam Anay Kahaniya Rating: 0 out of 5 stars0 ratingsOdhora Trityo Satya Rating: 0 out of 5 stars0 ratingsMaltzie Rating: 0 out of 5 stars0 ratingsCreepypasta: Speaking to the Dead Rating: 0 out of 5 stars0 ratingsThe Bed: Rekindling the Fire Rating: 0 out of 5 stars0 ratingsAfter His Departure Rating: 0 out of 5 stars0 ratingsFalling Rating: 0 out of 5 stars0 ratingsPlaying Jenna Rating: 0 out of 5 stars0 ratingsBikhre Sur Rating: 0 out of 5 stars0 ratingsStar Jumpers: An Accidental Quest for Freedom Rating: 0 out of 5 stars0 ratings로데오 Rodeo Rating: 0 out of 5 stars0 ratingsHijacked: The Creation Story Rating: 0 out of 5 stars0 ratingsHow Long Is Forever: How Long Is Forever, #1 Rating: 0 out of 5 stars0 ratings
General Fiction For You
The Terminal List: A Thriller Rating: 4 out of 5 stars4/5It Ends with Us: A Novel Rating: 4 out of 5 stars4/5The Unhoneymooners Rating: 4 out of 5 stars4/5The Alchemist: A Graphic Novel Rating: 4 out of 5 stars4/5The Silmarillion Rating: 4 out of 5 stars4/5Babel: Or the Necessity of Violence: An Arcane History of the Oxford Translators' Revolution Rating: 4 out of 5 stars4/5The Fellowship Of The Ring: Being the First Part of The Lord of the Rings Rating: 4 out of 5 stars4/5Nettle & Bone Rating: 4 out of 5 stars4/5My Sister's Keeper: A Novel Rating: 4 out of 5 stars4/5The Candy House: A Novel Rating: 4 out of 5 stars4/5Life of Pi: A Novel Rating: 4 out of 5 stars4/5The Priory of the Orange Tree Rating: 4 out of 5 stars4/5Beartown: A Novel Rating: 4 out of 5 stars4/5The Ocean at the End of the Lane: A Novel Rating: 4 out of 5 stars4/5Heroes: The Greek Myths Reimagined Rating: 4 out of 5 stars4/5Rebecca Rating: 5 out of 5 stars5/5Beyond Good and Evil Rating: 4 out of 5 stars4/5Meditations: Complete and Unabridged Rating: 4 out of 5 stars4/5The City of Dreaming Books Rating: 5 out of 5 stars5/5The Canterbury Tales Rating: 4 out of 5 stars4/5Shantaram: A Novel Rating: 4 out of 5 stars4/5The Dark Tower I: The Gunslinger Rating: 4 out of 5 stars4/5The Covenant of Water (Oprah's Book Club) Rating: 4 out of 5 stars4/5The Cabin at the End of the World: A Novel Rating: 4 out of 5 stars4/5The Second Life of Mirielle West: A Haunting Historical Novel Perfect for Book Clubs Rating: 5 out of 5 stars5/5Everything's Fine Rating: 4 out of 5 stars4/5Cloud Cuckoo Land: A Novel Rating: 4 out of 5 stars4/5The Lost Flowers of Alice Hart Rating: 4 out of 5 stars4/5The Dry: A Novel Rating: 4 out of 5 stars4/5Pet Rating: 4 out of 5 stars4/5
Reviews for নিষিদ্ধার ভালোবাসা
0 ratings0 reviews
Book preview
নিষিদ্ধার ভালোবাসা - সমীর সরকার "ভোলা মন"
নিষিদ্ধার ভালোবাসা
এক অসামান্য গল্প কথা
BY
সমীর সরকার ভোলা মন
pencil-logo
ISBN 9789354384189
© সমীর সরকার ভোলা মন
2021
Published in India 2021 by Pencil
A brand of
One Point Six Technologies Pvt. Ltd.
123, Building J2, Shram Seva Premises,
Wadala Truck Terminal, Wadala (E)
Mumbai 400037, Maharashtra, INDIA
E connect@thepencilapp.com
W www.thepencilapp.com
All rights reserved worldwide
No part of this publication may be reproduced, stored in or introduced into a retrieval system, or transmitted, in any form, or by any means (electronic, mechanical, photocopying, recording or otherwise), without the prior written permission of the Publisher. Any person who commits an unauthorized act in relation to this publication can be liable to criminal prosecution and civil claims for damages.
DISCLAIMER: The opinions expressed in this book are those of the authors and do not purport to reflect the views of the Publisher.
Author biography
তারপর তোর কাছে থেকে অনেক কিছু জানলাম আর শুনলাম অনুপ্রাণিত হলাম ভূমি দি।
এখানে যে তোর মত কেউ থাকবে যে আমাকে বুঝবে, এটা কল্পনা করতে পারিনি। অন্ধকার জীবনেও যে সম্পর্ক গড়া যায়, সেটা বুঝতে পারিনি।
তারপর রোজ ভেবেছি যে আমার টিম ঠিক আমাকে খুঁজে বের করবেই। ওরা ঠিক আমাকে বের করবেই, যেখানেই থাকি না কেন?
আর ওরা এলে আমি তোর মত হতভাগিনী কেও নিয়ে যাব নিজের সঙ্গে। এই কল্পনা করেই রোজ শান্তি পেতাম।
যদিও তোকে বলিনি সারপ্রাইজ দেব বলেই।
কিন্তু আর হলো না। হবে কি করে? ওরা হয়তো জানেই না আমি এখানে আটকে গেছি। কিন্তু স্যার তো জানতেন। উনি কি করে ভুলে গেলেন বুঝতেই পারলাম না।
আর না তো হলো আমার অপেক্ষার অবসান। না তো কেউ এলো পুলিশ বাহিনী নিয়ে আমাকে উদ্ধার করতে।
আর ততদিনে আমাকে ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে। হাঁটা, কাজ সবই শিখিয়ে দিচ্ছে। না করলে বা না পারলে পিঠে, গায়ে চাবুকের বাড়ি।
রমেশ তো গালে সজোরে মারত যখন- তখন।
অনেক প্রতীক্ষা করার পরেও আর কেউ এলো না! এনজিও সংস্থা আমাকে খুঁজতেও আর এলো না.... জানি না কেন?
একজন এভাবে হারালো আর কেউ খুঁজল না? এটা কি করে সম্ভব?
তবুও অনেকদিন প্রতীক্ষা করলাম এসবের মাঝে। কিন্তু কেউই এলো না। ভীষণ কপাল খারাপ আমার! সবাই এত শীঘ্র ভুলে যাবে ভাবতে পারিনি !
তারপর সেই প্রথম সন্ধ্যার কাস্টমার!
এনজিও'র পোশাক খুলে সেই প্রথম শাড়ি পড়তে হবে আমাকে। সেই ফুরফুরে হওয়ায় উড়তে থাকা লাল শাড়িটা।
আমি ড্রেসিনের সামনে পরে- পরে কাঁদলাম। ফুলঝুরি কত ভয় দেখালো তবু রাজি হলাম না তৈরি হতে।
সেই ফুলঝুরি ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে লাগলো রেগে। রমেশ ওর পিছন- পিছন যেতে- যেতে বলছিল, -আরে কেন রাগ করছো? ওকে তৈরি করতে আমি প্যায়ারী কে পাঠাচ্ছি ।ও ঠিক পারবে তুমি মিলিয়ে নিও।
ফুলঝুরি কটমট করে বলছিল, -তুই একে কি শেখালি তবে? আমি কিছুই জানি না! তুই একে যদি আজ কাস্টমারের কাছে না দিতে পারিস ঠিক করে। ওকে তবে আমি খুন করে ফেলবো আর তোকে কি করবো, তুই নিজেও জানিস না!
বসে রইলাম সেভাবে। কাঁদছিলাম খুব.. কিন্তু আঁকড়ে ধরার মতন কিছুই পেলাম না!
পেলাম একটু পর একটা হাত। যেটা তোর হাত ভূমি দি!
,অনেক্ষণ তোর কথাগুলো শুনতে লাগলাম। তুই যে পালানোর পথ খুঁজছিস। তারপর পালিয়ে সবাই মিলে একটা নির্মল জায়গায় গিয়ে থাকবো। যেখানে কেউ আমাদের টাকা দিয়ে মাপবে না। যেখানে কেউ আমাদের তাদের অধীনে রাখবে না.....
কিন্তু এই পরিস্থিতি গুলোকে মানতেই হবে। নাহলে যে আরো বিপদ হতে পারে! নাহলে যে অনেক খারাপ কিছু করে দিতে পারে এরা।
তাই আর কোনো পথ পেলাম না। হয়ে উঠলাম নতুন এক রাতপাখি। যে রাতে জেগে ওঠে অপ্সরার মতো.. লোকের শয্যাসঙ্গী হতে। লোকের বুকে ঝড় তুলে আনন্দ দিতে।
আমি সত্যিই তোকে পেয়ে কি যে পেলাম জানি না ভূমি দি! তুই ছাড়া সত্যিই মরে যেতাম হয়তো! আচ্ছা মুক্ত হতে পারবো তো আমরা?"
ভূমির দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো মিনু।
ভূমি ওর দিকে চেয়ে বললো, -পারব রে।
তারপর আরো কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো ছাদের রেলিং ধরে। সকাল হবার একটু আগে ভূমি মিনুর হাত ধরে টেনে বললো -চল নীচে। আরেকটু ভালো করে ঘুমিয়ে নে বিছানায়।
ঘরে যায় দুজনেই। মিনুর ঘর আগে সিঁড়ি দিয়ে। ও ঘরে ঢুকে দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে রইলো পাল্লা ধরে যতক্ষণ না ভূমি নিজের ঘরে যায়।
তারপর ভূমি দরজায় গিয়ে ওকে হাত নাড়াতেই ও ঘরে ঢোকে।
মিনুর চোখ বোজা থাকলেও খুব তাড়াতাড়ি ঘুম এলো না। ভাবতে লাগলো অতীত আর ওর সেই চিৎকার! কানের সামনে বাজে যেগুলো আজ ও!
ভূমি ঘরে ঢুকে একটু জল খেয়ে নিল। চাদরটা গা থেকে খুলে আলমারিতে রাখলো। তারপর গরম ব্ল্যানকেটের ভেতর গেল।
যদিও এই বিছানায় ওকে আগে রাতে ঘুমাতে ভীষণ ঘেন্না লাগতো। কারণ এই বিছানায় রোজ ওর সঙ্গে আরেকজন থাকে, যাকে ও চেনে না জানে না!
যে ওকে নষ্ট করে দিয়ে যায়!
কিন্তু এখন অভ্যেস হয়ে গেছে । তাড়াতাড়ি গিয়ে ঢুকলো ব্ল্যানকেটের ভেতরে।
ততক্ষণে ভোরের আলো পরিষ্কার হয়ে ঢুকেছে ওর ঘরে। অনেকের ঘর থেকে সকালের আলসেমির আওয়াজ আসছে।
ঘুম আসে না তাড়াতাড়ি ভূমির। ভাবতে লাগলো সেই মেয়েটির কথা, যে এনজিও হয়ে রক্ষা করতে এসে নিজেই এতজনের সামনে ধর্ষিত হয়েছিল!
সত্যিই জীবনটা কত রঙের! কখন যে কি হয়ে যায় বলাই মুশকিল। তবে ভীষণ সন্দেহ হয় ভূমির ওই হেড এর ওপর। যে ওর সম্পত্তির লোভ করতো। আবার এখানে আসার পর ওকেই দেখতে পায়নি মিনু।
ভীষন অদ্ভুত না। কালকে বলতে হবে মিনুকে। আজ তো আর আলোচনাই হলো না সেটা নিয়ে।
হয়তো মিনুও সেটাই সন্দেহ করে।
*************
কদিন পর সন্ধ্যায় প্যায়ারী সেজেগুজে বসে ছিল। ক্রমশ মনটা আপনা থেকেই কেমন যেন করতে লাগলো। এর মানেটা ও জানে না। অনেক আগে ওর এমনটা হতো। আর সেদিনই কিছু না কিছু খারাপ হতই হতো। মানে আপন লোকগুলোর কিছু হলে ওর এমনটা হতো।
কিন্তু এখন কেন হচ্ছে? যদিও এখানে ওর কেউ নেই মিনু আর কজন মেয়ে ছাড়া। তবে তাদেরই কি কিছু হবে নাকি?
মিনুর জন্য সবচেয়ে বেশি মন কেমন করছির ওর। কারণ এই দুনিয়ায় এখন মিনুই ওর আপনজন। আরেক ছিল দিব্যা। সে এখন কোথায় নিজেই জানে না প্যায়ারী। ওর কথাও মনে পড়লে কষ্ট হয় ভূমির। কি জানি রূপকের শুকনো সমাধির মাটি কান্নায় ভিজিয়ে দিতে পারবে কি না দিব্যা। আর ওর সঙ্গে কোনোদিন দেখা হবে কি না?
ওদের যাতে কিছু না হয়, সেটার জন্যই হাত জোড় করে ভগবানের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করে নিলো ভূমিকা।
আবার ভাবলো -'যদি ওদের সত্যিই কিছু হয়?'
এইসব ভাবতে ভাবতে নিজের মাথায় আলতো করে থাবরে দিয়ে বলে উঠলো মনে মনে -'এইসব কি ভাবছিস তুই প্যায়ারী?...'
তারপর অনেক চেষ্টা করতে লাগলো এমন ভাবা মন থেকে দূর করা।
কিন্তু কিছুতেই পারছিল না।
জানালাটা খুলে দিয়ে সেই অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে রইলো বহুক্ষণ। মনটা তবুও আনচান করতেই লাগল। কিছুতেই শান্ত হলো না। শেষে বসলো এসে বিছানায়। মাথার রজনীগন্ধা ফুলের গন্ধটা তখন বাজে লাগছিল নিজের কাছে। গায়ে লাগানো দামি পারফিউমের গন্ধটা তখন ওর পেট উগরে বমি বের করতে চাইছিল। এইসব ওর বড্ড নোংরা মনে হয়! তাই সহ্য করতে পারে না।
খট করে একসময় দরজাটা খুলে যায়। ভেতরে ঢুকলো এই মধ্যবয়সের পুরুষ লোক। মুখে কিছু পাবার আনন্দ। ফর্সা গায়ের রঙ, লোমের ভাব প্রচুর গায়ে, বড়ো করে রাখা গোঁফ, দাঁড়ি, মাথার চুল সামান্য টাক পড়া।
প্যায়ারী ওনাকেই খুশি করতে নিজের বানানো গানটা গেয়ে উঠলো একসময় নিজের লম্বা বিনুনিটা নাচাতে নাচাতে,
-" আমার গায়ের আগুনে....
পুড়িয়ে দে আজ নিজেকে!
পতঙ্গ হয়ে চলে আয় ফুলের কুঁড়ির মাঝে!"
লোকটিও তাড়াতাড়ি প্যায়ারীকে পিছন থেকে জড়িয়ে নিলো। তারপর ওর ঘাড়ে মুখ গুজে চুমু খেতে লাগলো।
প্যায়ারী নিথর হয়ে রইল। গানের সুর কাঁপতে লাগলো, তবু গাইতে লাগলো। কারণ ও জানে রমেশ ঠিক দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে ওর পাহারায়।
তাই প্যায়ারীর চোখের জল চোখের বাইরে বন্যা হবার হুকুম পায় না, সেগুলো চোখের মাঝেই মিশে যায়। বাইরে বেরোনো যে নিষেধ।
**************
মিনুর ঘরে তখন বসে কোজাগরী,যার বর্তমান নাম ইমলি। কোজাগরীও প্যায়ারীর ভক্ত একরকম। তবে ও নিচতলায় থাকে ও, তাই রোজ এখানে আড্ডা দিতে আসতে পারে না।
আজ এসেছে। তবে প্যায়ারীকে পায়নি। ওর ঘরে যে কাস্টমার চলে এসেছে। আর এখন খুব শীঘ্র ওদের ঘরেও ঢুকবে। তখনই ওর নীচ হতে ডাক পড়বে। নীচে এখন ওর বড্ড বাজে লাগে।
মাঝবয়সী ঝিল্লি এখন রসের গল্প নিয়ে বসেছে নিচের বারান্দায়। কি সব ভাষা!
শুনতেই কান ঝালাপালা হয়ে ওঠে! তাই ও এখানে আসে। প্যায়ারীর মুখে রামায়ন, মহাভারত অনেক ভালো লাগে ওর। জ্ঞান ও নিতে পারে অনেক।
******************
রমেশ প্যায়ারীর ঘরের সামনে আড়ি পেতে থেকে যখন দেখলো ও বেশ কাজ করছে, তখন নিচে আসতে সিঁড়ির দিকে এগোলো। মুখে একটা দারুণ হাসি।
সিঁড়ির আগে মিনুর ঘর। ওখানেই চাপা কথার আওয়াজ শুনে দরজায় কান পাতলো।
ভেতরে কোজাগরী ওরফে ইমলির গলা, -এভাবেই কাটাতে হবে সারাজীবন... এটাই আমাদের জীবন রে!
মিনু ফিসফিস করে বলে উঠলো, -"আমরা খুব শীঘ্র পালানোর বন্দোবস্ত ঠিক করবো। আর সেদিন রমেশ নামের কুত্তাটাকে আমি নিজে খুন করে যাব.. ওর দাম্ভিকতা শেষ করে দেব। নাহলে শান্তি হবে না আমার! সেদিন ঠিক সবাই পালাবো। তুই মিলিয়ে নিস কোজাগরী।
পর্ব-৯
কোজাগরী বলছিল, -কিন্তু মিনু দি, কি করে পারব এটা? এখান থেকে বেরোনোর তো কোনো পথই নেই! সেটা তো কল্পনাও করা যায় না!
মিনু একটু হেসে নিয়ে বললো, -"কে বলল কল্পনাও করা যায় না? শুধু ধৈর্য ধরতে হবে। দেখিস আমরা পারব। আর ওই রমেশ আর ফুলঝুড়িকে সেদিন কুত্তার মতো করে লাথি মারবো। ওগুলোর তেল বেড়েছে... ওই তেল
ঝড়িয়ে দিতে হবে। দেখিস আমরা পারব রে! বিশ্বাস রাখলে সব হবে।"
কোজাগরী স্বল্প আনন্দিত স্বরে বলে উঠলো, -সত্যিই হবে এটা! ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠছে! কিন্তু কার মাথায় দিদি এমন ভাবনা এলো? নিশ্চয় সবাই মিলে তোমরা ঠিক করেছ?
মিনু নিজের ঠোঁট এ আঙ্গুল দিয়ে কোজাগরী কে চুপ হতে বললো ফিসফিস করে -দাঁড়া দেখিত দরজার বাইরে কেন যেন মনে হচ্ছে কেউ আছে!. কেউ যদি শুনে ফেলে? দাঁড়া ভালো করে দেখে এসে তোকে সবটা বলছি..
বলেই দরজার দিকে এগোলো। আর কোজাগরী শান্তিমতো বিছানার বালিশটা জড়িয়ে ধরে বসে পড়লো।
দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো মিনু। দরজাটা খুলে বাইরে বেরোতে যাবে... আর অমনি চমকে গেল!
দরজায় হেলান দিয়ে শুনতে থাকা রমেশ হুড়মুড় করে পড়ে যেতে যেতে বেঁচে যায়।
মিনু স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে! কাঁপছিল ওর সারা শরীর। তবে কি শুনতে পেয়েছে রমেশ সবটাই?
মিনুর নিজের শরীরকে নিজেই যেন কন্ট্রোল করতে পারছে না। কেঁপে চলেছে থরথর করে। আর চোখদুটো বিস্ফারিত!
আর কোজাগরী তখন সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে। কাঁপছিল সে ও। কি হবে এবার!...
রমেশ কে নিয়ে এক্ষুনি গালি দিচ্ছিল মিনু। সেগুলো কি তবে শুনে ফেললো রমেশ?
মিনু মাথা নিচু করে আছে। কিছুই বলতে পারল না।
রমেশ শীঘ্র ঠিক হয়ে দাঁড়ালো।
কোজাগরী দেখলো অদ্ভুত চোখে, কেমন করে রমেশের দু-পাশে গালের দাঁড়ির মাঝে অংশটা রাগে ফুলে উঠতে লাগলো। চোখে বিষভরা চাহনি।
মিনু থতমত খেয়ে রইলো। কোজাগরী বুঝতে পারলো এখনই কিছু করতে হবে। নইলে মিনুর ভীষণ বিপদ হতে পারে। তাই দৌড়ে দরজার কাছে গিয়ে হাতটা ধরে ফেলল মিনুর।
মিনু অবাক হয়ে তাকায় ওর দিকে।
কিন্তু তার আগেই রমেশ সজোরে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় কোজাগরী কে। কোজাগরীর মাথা দেওয়ালে লেগে রক্তাক্ত হয়ে যায়। যন্ত্রনায় কাতরাতে লাগলো ও।
দুই হাত দিয়ে মাথায় চেপে কঁকিয়ে উঠলো।
আর মিনু ওকে বাঁচাতে দৌড়ে যায় সেদিকে, -কোজা.. !
কিন্তু রমেশ ওর হাত ধরে ফেলে। নিজের শক্ত হাতের থাপ্পড় বসিয়ে দেয় ওর গালে। -শালি .... খুব বেশি ডানা গজিয়ে গেছে তোর!
বলেই ওর চুলের মুঠি ধরে ওকে মাটিতে ফেলে লাথি মারে একটার পর একটা।
মিনুর দেহটা ক্রমশ নিস্তেজ হয়ে আসে। কঁকিয়ে ওঠে ও। পায়ে পড়ে রমেশের, -ক্ষমা করে দাও প্লিস...!
আবার এগিয়ে আসে কোজাগরী সেই কষ্টকর দেহটা নিয়েই। এবার রমেশ হাতের কাছে পিতলের বড়ো ফুলদানি পেয়ে ওটা দিয়েই ওর মাথায় বসিয়ে দেয়। আর নড়তে পারলো না কোজাগরী। ধীরে ধীরে লুটিয়ে পড়লো মেঝেতে। চোখ দুটো দিয়ে জল গড়াতে লাগলো ওর মিনুর দিকে তাকিয়ে।
মিনু নিস্তেজ দেহে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো।
এবার রমেশ আর সুযোগ দেয় না ওদের। বাইরে অন্ধকারের দিকে টেনে বের করতে লাগলো মিনুর দেহটা।
গলায় ওর কাপড়টা জড়িয়ে দিয়ে ওকে টেনে টেনে বের করতে লাগলো। মেঝেতে শোয়া অবস্থায় ছিল মিনু। সেভাবেই ওকে গড়িয়ে নিয়ে যেতে লাগলো টেনে টেনে। ধাক্কা লাগলো খুঁটিতে, দেওয়ালে।
তখন সন্ধ্যা পেরিয়েছে। সবাই কাস্টমার নিয়ে ব্যস্ত নিজের ঘরে। শুধু দু-একজন বারান্দায় দাঁড়িয়ে কাস্টমারের জন্য। ওরা অবাক হলো, কিন্তু কাছে যাবার মতো সাহস পেলো না!
তারপর সিঁড়ি দিয়ে গড়গরিয়ে নিয়ে যেতে লাগলো ওকে। সিঁড়িতে ধাক্কা লেগে নাকে মুখে রক্ত বেরোতে লাগলো মিনুর। কিন্তু চিৎকার করার মতো শক্তি পেলো না!
নীচে ফুলঝুরি ব্যস্ত ছিল ফোন করতে। এদিকে লক্ষ্য করতেই চোখ তার বিস্ফারিত হলো! -রমেশ ও মরে যাবে তো!
-যাকগে মরে ফুলঝুরি। যদি না মরে তো আমাদের মরতে হবে ওর জন্য!
চিৎকার করে করে উত্তর দিতে লাগলো রমেশ।
ততক্ষণে দু- একজ জমে গেছে নিচের বড়ো দালানে যেখানে ফুলঝুরি দাঁড়িয়ে।
_কি হয়েছে রমেশ?ঐভাবে মারছিস কেন ওকে?
রমেশ গিয়ে ওর কাছে দাঁড়িয়ে দাঁতে দাঁত চেপে খুলে দেয় মিনুর গলায় জড়ানো কাপড়টা।
মিনু পড়ে রইলো নিথর হয়ে। অনেক কষ্টে উঠতে চেষ্টা করলো কিন্তু পারছিল না।
রমেশ ওর কাঁধে আরেকটা লাথি দিয়ে চিৎকার করে উঠলো, -এই রেন্ডির ভীষণ শখ এই দেওয়াল ভেঙে বাইরে যাবার। ডানা ছেটে দিতে হবে শালীর! বড্ড শখ তাই না! আর শালী... এই নিষিদ্ধপল্লীর মেয়েরা যে আর সাধারণ জীবনে ফিরে যেতে পারে না জানিস না তুই? তোদের মৃত্যু ও যে আমাদের অনুমতি ছাড়া হবে না!
মিনু তখন ও নিথর হয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতে পড়ে!
ফুলঝুরির দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো রমেশ, -জানো... ও কি প্ল্যান করছিল?
-কি রমেশ?
-"ও এখান থেকে পালাবে... সঙ্গে বাকিদের ও পালাতে সাহায্য করবে। ওরা ভেতরে ভেতরে এইসব বুদ্ধি করছে। আর ওদের হেড হলো....
বলতে বলতেই থমকে গেল রমেশের গলা। -আচ্ছা কি একটা নাম যেন বলতে যাচ্ছিল মিনু!... তার আগেই আমাকে দেখে নিলো। ফুলঝুরি ওকে ধর.. ওই নামটা জানতেই হবে। কে সে? দুজনকে আজ একসঙ্গে পুঁতে ফেলবো সমাধিতে!.. ধর ওকে ফুলঝুরি। ওকে মরতে দিলে নামটা জানা হবে না!
ফুলঝুরি এসে ধরে মিনুর মুখটা। জলের ঝাপটা দেয় রমেশ।
চোখ দুটো পিটপিট করতে লাগলো মিনু।
ফুলঝুরি ওর চুলের মুঠি ধরে বলতে লাগলো -বল সেই নাম!.. কে সে? নাহলে তোকে খুন করে দেব!
মিনু চোখদুটো শক্ত করে খুলে রাখলো। বিড়বিড় করে উঠলো, -মরে গেলেও বলবো না!
রমেশ ফুলঝুরির দিকে তাকিয়ে বলল, -আচ্ছা ওটা প্যায়ারী নয় তো? ওই তো মিনুর ভালো বন্ধু!
...
পর্ব-১০
মিনুর চোখ এবার খুলে গেল ভালো ভাবে। রক্তে ভেসে চোখের পলক বুজে আছে প্রায়। রক্ত লেগে ভ্রুতেও, আর সঙ্গে মাথার খুলে যাওয়া সাদা রজনীগন্ধা।
সন্ধের অন্ধকারে তখনো অনেকে থরথর কাঁপছে এইসব দেখে, কিন্তু বলতে কিছু পারছে না!
রমেশ আবার বলে উঠলো দাঁতে দাঁত চেপে, - এই প্যায়ারীই হতে পারে এদের মাস্টারমাইন্ড....
নিজের গায়ের শেষ শক্তিটুকু দিয়ে হেসে উঠলো মিনু। বলতে লাগলো মেঝেতে পড়ে থাকা অবস্থায়ই,
-"হাসা- হাসালি তুই ব-লদ!... ও তো ভীতু একটা মেয়ে! ও কি করে এইসব প্ল্যান করবে? ও তো রাতে রুমের বাইরে বেরোতে অব্দি ভয় পায় ভূতের ভ-ভয়ে!..
ও নাকি এইসব প্ল্যা- প্লান করবে?"
-আমাকে 'তুই- তোকারি' করে আবার বলদ বলছিস? কি সাহস তোর শালী!
রমেশ গিয়ে ওকে বসিয়ে ওর চুলের মুঠি ধরে ফেলে আবার। -"বল তবে কে? কে এসবের মাস্টারমাইন্ড? নাহলে তোর মরণ হবে আজ!
হাসলো অল্প মিনু। থুথু ছিটিয়ে দেয় রমেশের গালে, -এই নে-নেড়ী কুত্তা.... তোকে আমি বলবো না। মেরে ফ্যাল তুই। তবুও এই নরকের থেকে শা-শান্তি আ-আছে মরা! মেরে ফ্যাল আমাকে!
রমেশ থুতনি চেপে হাতের থাবা শক্ত করে জোরে ঘুষি বসিয়ে দেয় মিনুর নাকের মাঝে। মিনুর রক্ত বেরোতে লাগলো আবার। গলা দিয়ে স্বর ফুটলো না আর!
আরেকটা ঘুষি দেবে এমন সময় হাতটা গিয়ে ফুলঝুরি ধরে ফ্যালে, -ওকে তিলে তিলে কষ্ট দিতে হবে রমেশ। যাতে ও নামটা বলতে বাধ্য হয়! তবে ওর কথা অনুযায়ী মনে হচ্ছে প্যায়ারী হতে পারে না, ও খুবই ভীতু মেয়ে! আর প্যায়ারী অনেক সুখে আছে। ও কেনই বা অন্য কিছু ভাবতে যাবে।
মিনুর বন্ধ চোখের পাতা দিয়ে গড়িয়ে গেল দুফোঁটা চোখের জল। মনে মনে বলতে লাগলো, -ভূমি দি.. আমি মরে গেলেও তোর নাম বলবো না রে। কারণ আমার মৃত্যু হয় গেলেও চলবে, কিন্তু তুই মরলে চলবে না। কারণ তুই মরলে এই পল্লীর তোর আমার মতো মেয়েদের তবে কে রক্ষা করবে? আমি জানি তুই ওদের ঠিক একদিন মুক্ত করতে পারবি। সেজন্য এইটুকু ত্যাগ নাহয় করেই ফেললাম।
রমেশ এবার মিনুর গলা টিপে ধরে ওকে তুলে ধরে শূন্যে। -বলবি না শালী?
মিনু চোখ বুজে কাতরাতে লাগলো। ওর গলায় গোঙানির শব্দ ছাড়া আর কিছুই শোনা গেল না।
ফুলঝুরি ভয় পেয়ে গেল, -এই রমেশ। মারিস না ওকে! পুলিশ যদি.. আর ইনকাম টাও ভাব।
মিনুর শরীরটা উপরে তুলে ধরে হাসতে লাগলো রমেশ -পুলিশের ভয় তুমি পাও ফুলঝুরি? আর আমি? হা- হা- হা! আর ইনকাম? একে দিয়ে তো অনেক ইনকাম করলাম। এখন না করলেও হবে আর। এর মরণ ভালো, কারণ একে রাখলে বাকি মেয়েরাও ওর সঙ্গে সাহসী হবে। একটা ছোট্ট দেশলাই কাঠি কিন্তু পুরো অরণ্যে আগুন ধরিয়ে দিতে পারে----- কাউকেই ছোট ভাবা উচিত নয় তাই না ফুলঝুরি!
ফুলঝুরি আর কিছু বললো না। রমেশের কথাগুলো যুক্তিসম্মত। ওখানে আর বলার মতো কিছুই নেই। আর রমেশ কে ও রাগাতে পারবে না। রমেশ যে ওর ডান হাত। নারী পাচার যে রমেশই করে। ও ছাড়া ফুলঝুরি কিছুই না। তাই ওর কথার ওপরেও কিছু বলতে পারে না ফুলঝুরি।
বাকি মেয়েদের যার যার ঘরে চলে যেতে বলে রমেশ। আর বাইরের দরজা বন্ধ করে দিতে বলে। গার্ডরা তাই করে।
মেয়েরা কাঁপতে কাঁপতে ঘরে চলে যায়।
অনেকটা হুশ এ ফিরেছে মিনু। ওকে ঝপাত করে বসিয়ে দেয় রমেশ।
জল আর রক্ত মিশে ওর মুখে। এলোমেলো চুলে হারিয়ে যাওয়া রজনীগন্ধা, কিছু কিছু রজনীগন্ধা মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে আছে এদিক- ওদিক। শাড়িটা প্রায় খুলে যাওয়া অবস্থায়।
আলতো করে হেলান দিয়ে বসে ও। চোখ অনেক কষ্টে খুলে বলে, -"পারবি না রমেশ....
বলেই নেতিয়ে পড়ে আবার।
রমেশ ওকে আরো কষ্ট দিতে মেঝেতে ফেলে দেয়। ফুলঝুরি ওর হাত দুটো নিজের শক্ত হিলসমেত পা দিয়ে চেপে ধরে।
রমেশ শক্ত করে ওর পা দুটো ধরে, ছুঁড়ি দিয়ে কাটতে থাকে ওর পুরো শাড়িটা মাঝ বরাবর। তারপর ছুঁড়ি দিয়ে ওর গায়ে আঁচড় দিতে লাগলো। সেখান থেকে রক্ত বেরোতে লাগলো ফিনকি দিয়ে। আর বলতে লাগলো শক্ত চোয়ালে -বলবি না শালী?
যেভাবে প্রথম দিন ভূমিকাকে করা হয়েছিল ঠিক সেভাবেই করা হলো ওকেও। কিন্তু মিনুর মুখে হাসির আভা,
-এ- একটা প্র-পস্টিটিউড কে তুই নগ্ন হবার ভয় দেখাচ্ছিস রমেশ। সে তো রোজ নগ্ন হয়ে নতুন লোকের কাছে!...
তারপর চোখ বুজে বলে উঠলো মনে-মনে -আমি জানি ভূমিকা দি তুই পল্লীর সবাইকে রক্ষা করবি একদিন। তোর নামটা কিছুতেই মুখে আনতে পারব না রে। আমি মরে গেলেও ভাববো পল্লীতে একজন সাহসিনী আছে যে সবাইকে মুক্তি দেবে।"
****************************************
একসময় আলো আধারীতে উঠে বসে কোজাগরী। মাথায় ভীষন ব্যাথা অনুভব হলো ওর। মাথায় হাত লাগাতেই যন্ত্রনা করে উঠলো ওর। তারপর হাতটা আলোতে এনে দেখলো রক্ত!
বুঝতে পারলো না কিছুই। উঠে দাঁড়ালো আস্তে- আস্তে। ঘরের আসবাব এলোমেলো ভাবে দেখে বুঝতে চেষ্টা করলো। তখন সন্ধ্যার নির্জনতা ঘিরে ফেলেছে চারদিকে। একটু আগে যেই কলহ বা হৈচৈ ছিল সেটা এখন নেই। সবাই কাস্টমার নিয়ে ব্যাস্ত।
মিনুর ঘরের খোলা জানালা দিয়ে সন্ধের মিষ্টি বাতাস ঢুকে পর্দাগুলো ওড়াতে লাগলো। তার উড়ার সঙ্গে- সঙ্গে বাইরের অন্ধকার আকাশের তারাগুলো লক্ষ্য করা যাচ্ছিল।
ধীরে- ধীরে সবটাই মনে পড়তে লাগলো কোজাগরীর। মিনুকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল নীচে, এই অব্দি ওর স্পষ্ট মনে আছে!
তাড়াতাড়ি দেহের সমস্ত যন্ত্রনা ভুলে ও বাইরের দিকে বেরুলো।
বারান্দা গুলোতে স্বল্প আলোয় একটা আলো-আধারী পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। আর কাউকে দেখতে পেলো না। রেলিং ধরে নিচের দিকে তাকাতেই অবাক বিস্ময়ে মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে পড়লো কোজাগরী।
ফুলঝুরি আর রমেশ ভীষন ভাবে ছুঁড়ি দিয়ে মিনুর গায়ে ছুঁড়ি বিঁধে দিচ্ছে আর চিৎকার করে বলছে, -বল কে সে?
নিস্তেজ দেহে তখন ও হাসছে মিনু, -নো, নেভার.. বিচ!
কোজাগরী সিঁড়ি দিয়ে ছুটতে লাগলো নিচের দিকে। গায়ে একটুও জোর নেই! চোখে জলের ধারা। সবকিছু ঝাপসা লাগছে ওর!
মিনু হয়তো আর বাঁচবে না। এরা ওকে বাঁচতে দেবে না!
-এই শালী.. আসিস না। তোকেও এর মতন করে লটকে দেব! খবরদার আসবি না। ওকে বল বলতে.. কার প্ল্যান এগুলো?
রমেশের গর্জন শুনে থমকে যায় কোজাগরীর পা। কাঁপতে লাগলো ও। কি করবে এবার?
মিনু ওর দিকে তাকিয়ে করুন চোখে মেঝেতে পড়ে রক্তাক্ত অবস্থায়, -আ- আসিস না কো- কোজগরী। আমার দিব্যি!
ছুটতে লাগলো এবার কোজাগরী ভূমিকার ঘরের দিকে। দরজায় গিয়ে থাবরাতে লাগলো, আর বলতে লাগলো হড়বড় করে -দরজা খোলা ভূমি দি!.. ওরা মিনুকে মেরে ফেলবে! তুমি কি করো ভূমি দি!. প্লিস!
ভূমি ওরফে প্যায়ারী তখন লোকের মন মাতাতে ব্যস্ত। লোকটির গালে ওর জিভের লালার সঙ্গে মিশে গেছে ওর চোখের জলও।
লোকটি তখন মত্ত ওকে নিয়ে দেহ- দেহ খেলায়।
হঠাৎ কোজাগরীর গলা শুনে লোকটিকে ছাড়িয়ে উঠে দাঁড়ায় ও।
কিছু বলে উঠবার আগেই ওর অর্ধনগ্ন দেহটা জাপটে ধরে লোকটি নিজের পেশীবহুল দেহ দিয়ে। তারপর ওকে বিছানায় নিজের বাহুবন্ধন দিয়ে জাপটে ধরে, -এখন ও সময় হয়নি ছেড়ে দেবার।
-আমার বাইরে যেতে হবে।প্লিস ছেড়ে দিন! পরে যা ইচ্ছে করবেন!
বুজে আসা গলায় বলে উঠলো প্যায়ারী।
লোকটা ওকে কথা বলতে না দেওয়ার জন্য ওর মুখ চেপে ধরে এক হাতে আরেক হাতে ওর গলা। তারপর ওকে পিছন দিক থেকে জড়িয়ে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, -টাইম ইস মানি!
অনেক্ষণ ডাকার পরেও যখন কোনো উত্তর পায় না ঘর থেকে তখন দরজার নীচে লুটিয়ে বসে পড়ে রক্তাক্ত কোজাগরী, -কি করলে তুমি ভূমি দি! তুমি না সবার ভরসা? আজ তুমি কি তবে সত্যিই প্যায়ারী নামে হারিয়ে গেছো! মিনুর মৃত্যুর চেয়েও বড় আজ তোমার কাছে তোমার লোক মাতানো! মিনু যে তোমার নাম বলেনি বলে নিজের গায়ে হাজার ছুঁড়ির আঘাত সহ্য করছে! সত্যিই কি তোমার মত দামি প্যায়ারীর কাছে আজ সম্পর্ক কিছুই না, শুধুই টাকা সব!... মিনুকে আর দেখতে হবে না প্যায়ারী!.. তুমি ব্যস্ত থাকো দেহ খেলায়!
প্যায়ারী তখন বাঘের হাত থেকে লড়ে যাওয়া হরিণীর মতোই ছটফট করতে লাগলো। কিন্তু শিকার পেয়ে বাঘ ছাড়বে কেন ওকে? প্যায়ারীর গলা টিপে লোকটি নিজের কাজে ব্যস্ত।