রূপান্তর: প্রথম খন্ড

By গোপাল পাত্র

সামাজিক উপন্যাস - "রূপান্তর" (প্রথম খন্ড)

একটা বিকট শব্দে সম্বিত ফিরে পায় সমরেশ - বুঝতে অসুবিধা হয় না আন্দাজ ঢেড়শ-দুশো মিটারের মধ্যে বোমা ফাটার শব্দ….সঙ্গে সঙ্গে মেন রোডে দু -চার খানা বাইক দানবীয় আওয়াজ তুলে - ছুটে পালালো মনে হলো ! গ্রামের রাস্তা দিয়ে ও দু-এক জন ছুটলো …মৃদু কাদরানির শব্দে সমরেশের কান তখন ভারী হয়ে আসছে ! কিন্তু আগে এমনটা তো ছিল না কিন্তু এই কেন "রূপান্তর " ? একদিনে তো হয়নি প্রায় দু'দশক আগেই অজান্তে গ্রামের মানুষ - এর বীজ বপন করেছিল ! তার সাক্ষী স্বয়ং সমরেশ … ! আজ থেকে প্রায় দুই দশক আগে কার কথা বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ... সালটি ২০০০- কিংবা ২০০১ … গ্রামের নাম ভগবান পুর - আর মূলত ভগবান পুর মৌজাকেই কেন্দ্র করেই তিলে তিলে গড়ে উঠেছে সুবিশাল "ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক " যেটি বতর্মানে ভারত বর্ষ কেন এশিয়া বিখ্যাত ! এই কাহিনীর মুল উপজীব্য …

• Language: English
• Publisher: Pencil
• Release date: Feb 8, 2021
• ISBN: 9789354383113

Book preview

রূপান্তর

প্রথম খন্ড

BY

গোপাল পাত্র

---

pencil-logo

ISBN 9789354383113

© গোপাল পাত্র 2020

Published in India 2020 by Pencil

A brand of

One Point Six Technologies Pvt. Ltd.

123, Building J2, Shram Seva Premises,

Wadala Truck Terminal, Wadala (E)

Mumbai 400037, Maharashtra, INDIA

E [e-mail]

W www.thepencilapp.com

All rights reserved worldwide

No part of this publication may be reproduced, stored in or introduced into a retrieval system, or transmitted, in any form, or by any means (electronic, mechanical, photocopying, recording or otherwise), without the prior written permission of the Publisher. Any person who commits an unauthorized act in relation to this publication can be liable to criminal prosecution and civil claims for damages.

DISCLAIMER: The opinions expressed in this book are those of the authors and do not purport to reflect the views of the Publisher.

Author biography

কবি - গোপাল পাত্র

এক অপাংক্তেয় কবি -গল্পকার জীবন যুদ্ধে লড়ে যাওয়া এক হার না মানা সৈনিক - যাঁর হাতিয়ার নির্ভীকতা এবং সততা...

বিস্তারিত জানতে গুগোল এ সার্চ করুন বাংলা বা ইংরেজি হরফে লিখুন গোপাল পাত্র সার্চ করলেই পেয়ে যাবেন সমস্ত তথ্য !

Poet - Gopal Patra

 The life of an impeccable poet-storyteller is an invincible soldier who fought in battle - whose tool is fearlessness and honesty ...

 Search Google for details, type in Bangla or English letters, search for Gopal Patra and you will get all the information!

Contents

রূপান্তর - গোপাল পাত্র

রূপান্তর - গোপাল পাত্র

ধারাবাহিক সামাজিক উপন্যাস -

  রূপান্তর  

(প্রথম খন্ড )

গোপাল পাত্র 

একটা বিকট শব্দে সম্বিত ফিরে পায় সমরেশ - বুঝতে অসুবিধা হয় না আন্দাজ ঢেড়শ-দুশো  মিটারের মধ্যে বোমা ফাটার শব্দ….

সঙ্গে সঙ্গে মেন রোডে দু -চার খানা বাইক দানবীয় আওয়াজ তুলে - ছুটে পালালো মনে হলো  !

গ্রামের রাস্তা দিয়ে ও দু-এক জন ছুটলো …

মৃদু কাদরানির শব্দে সমরেশের কান তখন ভারী হয়ে

আসছে  ! এমন সময় একটা ভয় মিশ্রিত কন্ঠ কানে এল কি গো তুমি কোথায় ? শুনতে পেলে ?

সমরেশ শুধু মুখে আওয়াজ দিলো -হু ...

বিকট শব্দে গৃহিনীরও ঘুম ভেঙে গেছে বিছানা থেকে উঠে বসেছে !

ভয়ার্ত গলায় আবার বলল তাড়াতাড়ি আলো টা বন্ধ করে... শুয়ে পড়ো !

 সমরেশ এতটুকু দেরী না করে দরজার ছিটকিনি দুটো ভালো করে দিলো ! আলো টা নেভাতে যাবে একবার মনে হলো -বাড়ির মেইন গেটের চাবি দেওয়া হয়েছে তো ? ক্ষণিকেই মনে হলো হ্যাঁ সে নিজেই রাতের খাবার খেয়ে সব গেটের চাবি দিয়েছে - সব্বাই  যখন ঘুমচ্ছে সে বসেছে দুদণ্ড সাহিত্য চর্চা করতে ... এটা তার শু বা বদভ্যাসও বলতে পারেন  ! কিন্তু কত কালের অভ্যাস তো সহজে ছাড়া যায় না !

খানিক দেরি দেখে গৃহীনীর মৃদু ধমক - কি কথাটা কানে গেল না !

 ঢক ঢক করে এক গ্লাস জল খেলো সমরেশ ... টেবিল ল্যাম্পটা নেভাতে যাবে- কি মনে করে দেওয়ালে টিক টিক করা ঘড়ি টার  দিকে একবার তাকিয়ে দেখলো ... শ-বারোটা বাজে ! 

 আলো নিভিয়ে সঙ্গে সঙ্গে বিছানা নিলো সমরেশ ! কিন্তু ঘুম যে কিছুতেই আসছে না.. কত রকম উদ্ভট চিন্তা মাথায়  আসছে - কিছুটা বাস্তবিক সত্য আবার কিছুটা কল্পনা মিশ্রিত !

যে ঘটনাটি ঘটেছে তাতে তো সন্দেহ নেই কেউ গুরুতরভাবে আহত অথবা নিহত  … কে জানে স্থানীয় লোক - না ভিন - দেশি ?

 সকাল না হতে হতেই পুলিশি তাণ্ডব শুরু হয়ে যাবে - পরিকল্পনা মাফিক কিছু লোকের নামে সাজানো মামলা হবে ! আসল অপরাধীরা পাকাল মাছের মতোই হাতের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে যাবে !  ধরা পড়বে তথাকথিত কিছু চুনো পুঁটি - আর নিরীহ সাধারণ কিছু মানুষ ঘরছাড়া হবে ... 

কারন স্থানীয় সাধারন মানুষের কিছু ঘরে পুলিশের রেট হবে প্রতি রাতে ! সাধারণ নিরীহ মানুষকে নিয়ে পুলিশের তো যত হম্বিতম্বি আজকাল ! 

অর্থের মানদণ্ডে দন্ডিত হয় সমগ্র বিচারব্যবস্থা  …

খুন -রাহাজানি -চিটিংবাজী- ধর্ষণ-আজ নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা ! সবাই সব জানে -অথচ প্রশাসনের চোখে ঠুলি বাঁধা ...চোখ থেকেও অন্ধ ... 

চোর- ছ্যাচড়- দালাল -চিটিংবাজ- রাজনৈতিক দলাদলি ... দালাল গোষ্ঠি -প্রোমোটার গোষ্ঠীর নিজেদের মধ্য গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার  সাধারণ মানুষ   !  সাধারণ মানুষের কোনো ক্ষমতা নেই কিছু বলার বা কিছু করার ! তাই রাতে আটটা -নটা বাজতে না বাজতেই খাওয়া-দাওয়া সেরে সমস্ত গেটে চাবিতালা দিয়ে শুয়ে পড়ে ...!

 ব্যতিক্রম একমাত্র সমরেশ - তাই সবাই যখন নিদ্রামগ্ন  - তখন সমরেশ তার সাধের ছোট্ট টেবিলটাই -  কলমের খোঁচায় এঁকে চলে... বয়ে চলা জীবনালেখ্য…

আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি !

কিন্তু এইভাবে আর কতদিন চলবে ?  নিজেরই সংশয় জেগেছে মনে -বিগত কয়েক মাস যা চলছে… তাতে  স্থানীয় গ্রামবাসীর  মধ্যে অনেকেই পিতৃকুলের ভিটেমাটি ছেড়ে পালিয়েছে !  পালিয়েছে মানে  পালাতে বাধ্য  হয়েছে-  

তা না হলে প্রাণ নিয়ে টানাটানি!  নয় তো টানো জেলের ঘানি !

 কিন্তু আগে এমনটা তো ছিল না … কিন্তু এই কেন রূপান্তর   ? একদিনে তো হয়নি একদিনে তো কোন কিছু হয়না…

প্রায় দু'দশক আগেই অজান্তে গ্রামের  মানুষ ই - এর বীজ বপন করেছিল ! তার সাক্ষী  স্বয়ং সমরেশ … !

 আজ থেকে প্রায় দুই দশক আগে কার কথা বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ... সালটি ২০০০- কিংবা ২০০১ 

গ্রামের নাম ভগবান পুর - আর মূলত ভগবান পুর মৌজাকেই কেন্দ্র করেই  তিলে তিলে গড়ে উঠেছে সুবিশাল  ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক যেটি বতর্মানে ভারত বর্ষ কেন এশিয়া বিখ্যাত ! 

 এই কাহিনীর মুল উপজীব্য - ভগবানপুরের জীবনালেখ্য ... যার সামাজিক -রাজনৈতিক পারিবারিক -  ভৌগলিক - প্রাকৃতিক -সর্বোপরি মানবিক সম্পর্ক গুলো কেমন ভাবে ধাপে ধাপে  

রূপান্তরিত হয়েছে তার একটি বাস্তব দলিল ! 

বিধিসম্মত সতর্কীকরণ 

**********************

রূপান্তর উপন্যাস টি  সম্পূর্ণ প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য …

গল্পে বিভিন্ন পল্ট তৈরি করার জন্য কখনো সাসপেন্স কখনো ভয়-ভীতি বা কখনো আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার প্রসঙ্গ এসেছে !

আবার কখনো ধূমপান- মদ্যপান- মাদক সেবনের প্রসঙ্গ উত্থাপিত হয়েছে কিন্তু মদ্যপান- ধূমপান বা যেকোন  মাদক দ্রব্য সেবন স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক !

আর এই গল্পের স্থান-কাল-পাত্র - ঘটনাবলী এবং সমস্ত চরিত্র ই কাল্পনিক- যদি

বাস্তবের সঙ্গে মিল থেকে থাকে তাহলে সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত এবং কাকতালীয় ! একজন লেখক কোন ভাবেই দায়ী নয় ........  

প্রথম অধ্যায়:-

পূর্বে  হাওড়া গামী রেলস্টেশন শাখখালী- পশ্চিমে মুম্বাই গামী দু নম্বর জাতীয় সড়ক বলুহাটি - গ্রামের প্রান্তে লালমাটির মোরাম বিছানো রাস্তা সেতুবন্ধন করেছেন এবং জাতীয় সড়ক ও স্টেশনের মধ্য ! উত্তর-দক্ষিনে চাষযোগ্য চাষের জমি ...আর লাল মাটির রাস্তার পাশেই অবস্হিত  গঙ্গা নদীর সঙ্গে যুক্ত বড় জলা ক্যানিং বা খাল !

স্টেশন এবং জাতীয় সড়কের মাঝামাঝি এই ভগবান পুর গ্রাম …

গ্রামবাসীরা বেশিরভাগই মধ্যবিত্ত অথবা নিম্নবিত্ত  কিছু কিছু বিত্তবানের আবির্ভাব হয়েছে ইদানীংকালে ... মাঝারি ঘনবসতি এলাকা ...

চারিদিকে গাছপালা আম- জাম -সুপারি- তাল -নারিকেল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে - গ্রামের বেশিরভাগ বাড়ি ইটের দেওয়াল - টালির ছাওয়া - অবশ্য কিছু কিছু মাটির বাড়ি ও খড়ের ছাওয়া ঘরও চোখে পড়ে - ইদানিং বেশ কিছু পাকা দালান বাড়ী  কনক্রিটের হয়েছে ....

গ্রামের মাঝখান দিয়ে বয়ে যাচ্ছে ইট বিছানো পাকা রাস্তা -  একটি  প্রাথমিক বিদ্যালয় - 

তার চারটি ক্লাসের জন্য চারটি কামরা  ! কংক্রিটের ছাদ ওপরে ইটের পাঁচ ইঞ্চি গাঁথা হয়েছে কিন্তু ছাওয়ার কোন ব্যবস্থা এখনো পর্যন্ত হয়ে ওঠেনি ! গ্রামে কোন ডাক ঘর নেই - 

বছরখানেকের একটু বেশি হবে বিদ্যুৎ এসেছে ! 

এ-তো গেল গ্রামের প্রাকৃতিক পরিবেশের বর্ণনা এবার দৃষ্টি দেওয়া যাক সামাজিক এবং অর্থনৈতিক দিক গুলি দিকে -কোন সমাজ বা সভ্যতার ইতিহাস জানতে গেলে আগে জানা আবশ্যক তার অর্থনৈতিক এবং সামাজিক দিক গুলো কারণ অর্থই যে অনর্থের মূল কথা অস্বীকার করার উপায় থাকে না ! 

গ্রামের বেশিরভাগ মানুষই তপশিলি সম্প্রদায়ভুক্ত 

সম্পূর্ণ নিরক্ষর না বলে - অর্ধ শিক্ষিত বা নিরক্ষর বলাই যুক্তিযুক্ত ... চাকুরীজীবী নেই বললেই চলে হাতেগোনা  গুটিকতক মাত্র একজন  প্রাইমারি স্কুল মাস্টার একজন ব্যাংক চাকুরে - একজন হোমিওপ্যাথ ডাক্তার আর কিছু লোক চটকলে কাজ করে ! কিন্তু রাজনৈতিক

দলাদলি -পার্টি বাজি মোড়ল মাতব্বরদের অভাব হয়না !

গ্রামবাসীদের প্রধান জীবিকা মূলত চাষাবাদ - চাষ যোগ্য বিস্তীর্ণ ভূভাগ না থাকলেও চলে যায় মোটামুটি - যে যেমন পাবে এক বিঘা দুই বিঘা অথবা তিন বিঘা জমি খুঁজে বেড়ে পেয়ে যায় ঠিকই- নিজস্ব অথবা ভাগে ভিতে… বছরে দুবার আমন এবং বোরো ধানের চাষ হয় !

গঙ্গার সাথে যুক্ত বড় খালটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকায় নদীর জোয়ার ভাটায়  চাষের মাঠ গুলি পরিপূর্ণ হয়ে  ওঠে-তাতে সেচের  জলের খরচ বাঁচে - ফলে নিজেদের কায়িক পরিশ্রম এবং সামান্য খরচেই মাঠ গুলো শস্য-শ্যামলা হয়ে ওঠে !

আর বর্ষাকালেও বন্যার প্রাদুর্ভাব বা অতি বৃষ্টির জন্য ফসল নষ্ট হবার ভয় ও  থাকেনা !

খালটি থাকার জন্য গ্রামবাসীর আর একটা বিশেষ সুবিধা হয়েছে সেটি হলো বিভিন্ন মৌরসুমের বিভিন্ন প্রকার মাছ ও কাঁকড়া ! জোয়ারের সময়ে কিংবা বর্ষার জলে মাঠ খাল-বিল যখন জলে টইটম্বুর গ্রামের প্রায় অধিকাংশ মানুষই মাঠে -খালে-  বিলে মাছ ধরার জন্য বিভিন্ন প্রকার মাছ ধরার যন্ত্রপাতি যেমন ঘনি- আটোল বিভিন্ন ফাঁদির জাল বসিয়ে সাধ্যমত মাছ ধরে ...  পুঁটি- চাঁদা -খলসে -  ল্যাঠা মাছের সাথে সাথে পুরষ্ট কই - বড়-মাজারি সিঙ্গি - মাগুর অথবা শোল- শাল