রাধারমণ (Radharaman)
()
About this ebook
মহাভারতের সৌপ্তিক পর্বে ছিল এক ভয়ংকর অতিমারীর আলেখ্য। যে অতিমারীতে উত্তরাধুনিক কালের সভ্যতা তমসাচ্ছন্ন, তাই রয়েছে মহাকাব্যের ভাষায় ‘রাধারমণ’ উপন্যাসে। আর আয়ুধ যে ভালোবাসা, তা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। রাধারমণ অর্থাৎ কৃষ্ণ সমর্পণ করছেন নিজেকে রাধার কাছে— মানব জীবনের এমনকী যাবতীয় জীবকূলের সৃজনকে প্রবহমাণ রাখার জন্য। অতিমারীর মহাসংকটে ‘রাধারমণ’ যে এক রকমের জীবনবেদ, তা বোধহয় অস্পষ্ট নয়।
Abhijit Chaudhury
Novelist and short story writer Abhijit Chaudhuri was born on 1 September 1963 in Kolkata, West Bengal, India. His place of birth, a rented house at 26/6 Surya Sen Street, was very close to College Street, the cultural capital of the-then Bengal and, to some extent, India.The dark and gloomy lanes— buzzing with the mechanized clatter of the traditional printing press— where little Abhijit grew were the dwelling place for the lower middle class of the Bengali society but love and hope prevailed even in the most frustrating of human conditions fighting with abject poverty.Fairy tales and folklore of the traditional Bengal mingled with the magnificent heroic sagas from the two great epics, The Ramayana and The Mahabharata, were in the air as well as in the lips of grandmother and mother, the two women who greatly influenced the boy in shaping his dreams and his imaginations.However, the surreal ambience of the central Kolkata, its long afternoons, its dreamy evenings submerged in the fragrance of autumnal flowers and Mughal cuisine had its share in grooming the boy for a bigger, grander, more exotic world. The intricate lanes, bye-lanes and alleys introduced the boy to a magical adult world whose inhabitants were beggars, magicians, revolutionaries and even prostitutes.When Abhijit was just six years old the entire family got shifted to Konnagar, Hooghly. It was there that he received his formal education. Seeds of creative writing were woven in the boy’s mind by some of the charismatic teachers in high school who encouraged the boy to become a writer in future. Life suddenly became less cruel and more in harmony with the uncomplicated suburban friends and the lush greenery of the beautiful countryside just outside the industrial town that kept its time with the blowing sirens of the factoriesAbhijit returned to the metropolis to do his graduation (1983) and post graduation in English Literature (1985) and subsequently to receive a post graduate diploma in Personnel Management and Industrial Relations. (1991-1992)Mr. Chaudhuri began his professional career with the Indian Railways in 1988 only to leave the job next year in order to join the prestigious West Bengal Civil Service (Executive) as a Probationary Officer.This was the turning point of Abhijit’s life. He began to enjoy his profession as a Block Development Officer: meeting people from all walks of life, getting frequently transferred to new places, accommodating with changing topographies, being introduced to different obscurities, oddities and crises.The resultant experience soon started to produce novels and short stories of rare merit. Although Abhijit’s first published work was Shobdo Theke Mukto Jharuk (‘Let Pearls Drop from the Words’), a book of poems back in 1986, the young author soon realized that fiction was his forte and thus began an uninterrupted flow of writing producing not less than twenty volumes of novels and short stories. His fiction is both popular and critically acclaimed.
Related to রাধারমণ (Radharaman)
Related ebooks
Mahabharata: The Greatest Spiritual Epic of All Time Rating: 4 out of 5 stars4/5Radha: Love, War, and Renunciation Rating: 0 out of 5 stars0 ratingsLittle Blue Book on Krishna Rating: 0 out of 5 stars0 ratingsছাড়া পেল পোর্ট্রেটের প্রাণ Rating: 0 out of 5 stars0 ratingsBlue God: A Life of Krishna Rating: 5 out of 5 stars5/5A Portrait of Lord Shree Krishna Rating: 0 out of 5 stars0 ratingsThe Song of God Rating: 0 out of 5 stars0 ratingsThe Eighth Avatar Rating: 5 out of 5 stars5/5Bhagavad Gita - The Divine Song: A New Translation and Commentary Rating: 0 out of 5 stars0 ratingsMahabharata: The Woman's Life-Story Rating: 0 out of 5 stars0 ratingsMahabharatee: Five Women Who Held Court before the War Rating: 0 out of 5 stars0 ratingsTHE MAHABHARATA: A Modern Rendering, Vol 1 Rating: 5 out of 5 stars5/5Терезенің жарығы Rating: 5 out of 5 stars5/5Krishna in Mahabharatham Rating: 0 out of 5 stars0 ratingsSurmayi Sanjh - Ek Kavya Sangrah Rating: 0 out of 5 stars0 ratingsReturn Of Krishna In A Modern World Rating: 0 out of 5 stars0 ratingsIn the Lost City of Sri Krishna: The Story of Ancient Dwaraka Rating: 5 out of 5 stars5/5Krishna, Krishna-Arjuna, Krishnaa-Draupadi, and Vyasa: Mahabharata Rating: 0 out of 5 stars0 ratingsAjaya: Epic of the Kaurava Clan - Roll of The Dice Rating: 3 out of 5 stars3/5Rape of Draupadi Rating: 4 out of 5 stars4/5Light of the Himalayas: A Research-Based Novel on Buddha Rating: 0 out of 5 stars0 ratingsThe Royal Path of Shakti: The Erotic and Magical Techniques of Kaula Tantra Rating: 0 out of 5 stars0 ratingsThe Human Trinity Rating: 4 out of 5 stars4/5The Demon Deception Rating: 0 out of 5 stars0 ratingsNeelamadhav: A Blissful Journey Rating: 0 out of 5 stars0 ratingsVahana: Vehicles of the Gods Rating: 0 out of 5 stars0 ratingsDisrupter Rating: 0 out of 5 stars0 ratingsThe Divine Love Rating: 0 out of 5 stars0 ratingsAarya Rating: 0 out of 5 stars0 ratingsThe Complete Life of Krishna: Based on the Earliest Oral Traditions and the Sacred Scriptures Rating: 4 out of 5 stars4/5
General Fiction For You
Cloud Cuckoo Land: A Novel Rating: 4 out of 5 stars4/5The Fellowship Of The Ring: Being the First Part of The Lord of the Rings Rating: 4 out of 5 stars4/5The Covenant of Water (Oprah's Book Club) Rating: 4 out of 5 stars4/5A Man Called Ove: A Novel Rating: 4 out of 5 stars4/5The Silmarillion Rating: 4 out of 5 stars4/5The City of Dreaming Books Rating: 5 out of 5 stars5/5Shantaram: A Novel Rating: 4 out of 5 stars4/5The Dark Tower I: The Gunslinger Rating: 4 out of 5 stars4/5The Priory of the Orange Tree Rating: 4 out of 5 stars4/5The Unhoneymooners Rating: 4 out of 5 stars4/5Beyond Good and Evil Rating: 4 out of 5 stars4/5Life of Pi: A Novel Rating: 4 out of 5 stars4/5You: A Novel Rating: 4 out of 5 stars4/5Dante's Divine Comedy: Inferno Rating: 4 out of 5 stars4/5Ulysses: With linked Table of Contents Rating: 4 out of 5 stars4/5The Canterbury Tales Rating: 4 out of 5 stars4/5It Ends with Us: A Novel Rating: 4 out of 5 stars4/5The Ocean at the End of the Lane: A Novel Rating: 4 out of 5 stars4/5The Labyrinth of Dreaming Books: A Novel Rating: 4 out of 5 stars4/5The Lost Flowers of Alice Hart Rating: 4 out of 5 stars4/5Meditations: Complete and Unabridged Rating: 4 out of 5 stars4/5The Cabin at the End of the World: A Novel Rating: 4 out of 5 stars4/5Beartown: A Novel Rating: 4 out of 5 stars4/5Babel: Or the Necessity of Violence: An Arcane History of the Oxford Translators' Revolution Rating: 4 out of 5 stars4/5My Sister's Keeper: A Novel Rating: 4 out of 5 stars4/5Everything's Fine Rating: 4 out of 5 stars4/5The Princess Bride: S. Morgenstern's Classic Tale of True Love and High Adventure Rating: 5 out of 5 stars5/5Anonymous Sex Rating: 2 out of 5 stars2/5Nettle & Bone Rating: 4 out of 5 stars4/5The Alchemist: A Graphic Novel Rating: 4 out of 5 stars4/5
Reviews for রাধারমণ (Radharaman)
0 ratings0 reviews
Book preview
রাধারমণ (Radharaman) - Abhijit Chaudhury
১. সৌপ্তিক
শ্রীরাধিকার এসএমএস
যে-দেশে একটি ব্রহ্মাস্ত্রের দ্বরা অপর ব্রহ্মাস্ত্রকে প্রশমিত করা হয়, সেই দেশ জুড়ে কোথাও আগামী দ্বাদশ বর্ষ পর্যন্ত বৃষ্টি হবে না। সৌপ্তিকপর্বের শেষে মহর্ষি ব্যাসদেব অশ্বত্থামাকে এই কথাটুকু স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন।
শিবিরের মশালগুলি এখনও প্রজ্বলিত। নিকষ অন্ধকারের তীব্রতা কাটিয়ে ভোর হবে একটু পরেই। মহাভারতের যুদ্ধের পরের ছত্রিশতম বছর আগত। কৃষ্ণের মনে পড়েছে পুত্রশোকে সন্তপ্ত গান্ধারীর অভিশাপের কথা। তিনি যদুবংশীয়দের তীর্থযাত্রার আদেশ দিয়েছেন। দ্বারকা নগরী জনশূন্য, প্রজাহীন। প্রাণভয়ে আতঙ্কিত যাদবেরা সকলেই দলে দলে নগর ত্যাগ করেছে। কৃষ্ণ বৃদ্ধ হয়েছেন। দর্পণের প্রতিবিম্বে তাঁর পক্ককেশ প্রতিভাত হচ্ছে। যৌবন থেকে তিনি এখন বহু দূরে। সৌপ্তিক পর্বের অন্তিমে কোনো একটি বসন্তকালীন অপরাহ্ন বেলায় তিনি একটি এসএমএস পেয়েছিলেন। শোকাতুরা রমণীরা এমনকী শতপুত্রহারা সাধ্বী নারী গান্ধারীও যখন বিলাপে আকুল, কৃষ্ণ শোকক্ষেত্র থেকে দূরে দাঁড়িয়ে মেসেজ বক্স খুলে দেখে নিয়েছিলেন বার্তা, ‘তুমি কেমন আছ? আমাকে কি ভুলে গেছ?’ বার্তা প্রেরণকারিণী একদা প্রেমিকা রাধিকা। যার স্তনদ্বয়ের নিন্মতল কৃষ্ণের বড্ড প্রিয়সুখের ছিল। অভিমানবশত প্রেমিকার কোনো ঠিকানার উল্লেখ ছিল না। বিচলিত হয়ে উঠেছিল চিরপ্রেমিক কৃষ্ণের হৃদয়। তিনি এখনও রমণীমোহন। বহু গোপিনীর সঙ্গসুখ তখনও তাঁর স্মৃতি থেকে অপসৃত হয়নি। মহাভারতের যুদ্ধের মহাক্ষয়, ভয়ংকর প্রাকৃতিক দুর্যোগের করাল ছায়া, রাজনীতি সম্পর্কিত রাষ্ট্রচিন্তা, সব কিছু থেকেই তিনি মুহূর্তের জন্য দূরে সরে গিয়েছিলেন। বিষয়টি অনেকের অলক্ষে থেকে গেলেও গান্ধারীর দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল কৃষ্ণের দিকে। তিনি অভিশাপ বর্ষণ করেছিলেন যদুবংশের সমূহ ধ্বংসের।
প্রকৃতিতে প্রচুর অলক্ষণ এখন। প্রায়ই ঝড় ওঠে, সঙ্গে তুষারপাত। অথচ বসন্তকাল সমাগত। পক্ষীকুলের দেখা নেই। কেকারব নেই। কোকিল-জাতীয় পাখি যাদের কুহুরবে মথুরা, দ্বারকা, বৃন্দাবনের গৈরিক পথ উন্মুখ হয়ে উঠত, বিলীন হয়ে গেছে তারা। সেদিনের উদ্ভিন্নযৌবনা গোপিনীরা প্রৌঢ়া হয়েছেন। তাঁদেরও পলিতকেশ; গাত্রচর্ম আলগা হয়ে গেছে; মুখগহ্বর গতি হারাচ্ছে। অনেক বেলা পর্যন্ত চরাচর জুড়ে কুয়াশা ব্যাপ্ত থাকে। আকাশ থেকে সন্ধ্যাকালে উল্কাবর্ষণ হচ্ছে। সূর্যমন্ডল ধুলোয় আচ্ছন্ন। সূর্যোদয়ের সময় রবিকিরণে তেজ নেই এবং তার মণ্ডলেও কবন্ধের ছায়া। ভয়ংকর সব বলয় ঘিরে রাখছে চাঁদকে, তাই চন্দ্রিমাও রাহুগ্রস্ত। ব্রহ্মদন্ডের প্রভাবে বৃষ্ণি বংশের বিনাশ সমাগত।
নাগরিকদের জন্য কিছু সতর্কবাণী কৃষ্ণ উগ্রসেনের মাধ্যমে প্রেরণ করেছেন যেমন—এক গৃহে কোনো প্রকারের সোমরস যেন তৈরি না করা হয়; দুই এমনকী অন্য রাজ্য থেকে আমদানি করে নিজস্ব মুদ্রা ব্যয়ে সেবন অপরাধের। তবুও নগরে ইঁদুরের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকল, শোনা যায় বৃষ্ণি ও অন্ধকদের গৃহে শ্বেতবর্ণ ও রক্তনখর যুক্ত পায়রারা রাত্রিকালে গৃহস্থের নিদ্রার ব্যাঘাত ঘটায়। গাভীর গর্ভে গর্দভ, কুকুরের উদরে মার্জার এবং নেউলের পেটে ইঁদুরের জন্মকাহিনিও শোনা যাচ্ছে। কৃষ্ণের পাঞ্চজন্য শঙ্খধ্বনিও গাধার ভীষণ ডাকে অশ্রাব্য থেকে যাচ্ছে। কালের বিপরীত গতি দেখে কৃষ্ণ নিজেও নিশ্চিত যে, যাদবদের বিনাশ এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র। তিনিও যেন সেই নারীকে প্রত্যহ প্রত্যক্ষ করেছেন যাঁর নাম মৃত্যু। তাঁর কেষ্ঠীতে রয়েছে, ভূমিতে যখন তিনি শয়ন করবেন, তখন জরা নামক এক ব্যাধ তাঁকে বাণে বিদ্ধ করবে। ঈশান কোণের দিকে যাত্রা করতে ইচ্ছে হয় তাঁর। সেখানেই তো বঙ্গদেশ— রাধার দেশ। দীর্ঘাঙ্গী, আয়তনয়না রাধা। নিতম্ব কিঞ্চিৎ ভারী হলেও অসাধারণ বক্ষদেশ। সুলভিত বঙ্গভাষা। কোকিলের ধ্বনির মতোই মিষ্টতা। সেই দেশের মেয়েদের ভ্রূভঙ্গি অসাধারণ। রন্ধন-কুশলাও তারা। মৎস্য, মাংস অতি উত্তম রান্না করে তারা। আজীবন নিরামিষ আহার গ্রহণকারী বাসুদেব গোপন অভিসার কালে সেই সুস্বাদু আমিষ আহারও গ্রহণ করেছেন। খুব শ্যামলিমা সেখানকার প্রান্তরে। বায়ু সুখদায়ক, ভূমিও নদীমাতৃক। সৌপ্তিকপর্বের অন্তিমে রাধার এসএমএস সত্যিই তাঁকে আন্দোলিত করেছিল, তিনি উদ্বেল হয়ে উঠেছিলেন। মহাভারতের মহাক্ষয়ে তিনিও নিমিত্তমাত্র। গান্ধারী বিশ্বাস করেননি তাঁর এই কপটতা। যুদ্ধ প্রত্যক্ষ করার অভিলাষ কৃষ্ণের ছিল। তিনি আত্মগর্বী হনন-উন্মুখ দুই প্রধান গোষ্ঠীকে সত্যিকারের নিরস্ত্র করার চেষ্টা করেননি। সকল জনমানসে তিনি ভাবগ্রাহী জনার্দন কিন্তু নিজের মনের লক্ষ্যদেশ তাঁর নিয়ন্ত্রণের অধীনে নেই। অন্ত্যজ প্রজাদের প্রতিনিধি তিনি, তাই প্রকৃত পাকল। প্রেমিক যাবতীয় ভূমিকাকে অগ্রাহ্য করে নির্বাচন করেছিলেন ব্যক্তিগত উত্থান। সেই উচ্চাভিলাষ রাষ্ট্রকে বিপন্ন করেছে। তিনিও আর যাদবকুলের নয়নের মণি নন। অনুগত সংশপ্তক বাহিনীর সংহারও তাঁর প্ররোচনায় হয়েছে। রাজ্য পুরুষশূন্য। তিনিও বর্তমানে যৌনমিলনে অপারঙ্গম। স্নানাদি সমাপন করে কৃষ্ণ রাজবেশ পরিধান করলেন। ব্রাহ্মণেরা তাঁকে স্বস্তিবচনে সম্বোধিত করলে তিনিও প্রণাম জানালেন। দধি-ফলার সহযোগে তাঁদের অর্ঘ্য নিবেদন করলেন। এরপর কৃষ্ণ এলেন তাঁর স্বর্ণনির্মিত গরুড় চিহ্নিত রথে। ধ্বজা, গদা, চক্র, তলোয়ার, শঙ্খ, ধনুক ইত্যাদি আয়ুধ দিয়ে সুসজ্জিত রথ। শৈব, সুগ্রীব প্রভৃতি অশ্বরা কৃষ্ণের পুনরাগমনে চঞ্চল হয়ে উঠল। তিনি সারথি দারুককে অবরোহণ করতে বলে শকটের গতি বাড়িয়ে দিলেন।
5823.pngযাদবদের বিনাশ এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
লক্ষ্যপথের মতোই চির অচেনা ভবিষ্যৎ কাল। আজ তাঁর দিক্নির্ণয়ে ভুল হয়ে গিয়েছে। তিনি পুব দিকের পরিবর্তে যেন প্রত্যাবর্তন করেছেন সেই চিরচেনা প্রান্তরে। রমণীরা বিলাপ করছে। গণচিতার প্রজ্বলন এখনও অনির্বাণ।
একমাত্র স্থির জলেই মানুষ নিজের প্রতিবিম্ব দেখতে পায়। ইন্দ্রিয় শুদ্ধ ও স্থির হলে দুর্বিঞ্জেয় আত্মাকেও দেখা যায়। যে-আত্মা মানুষ নেত্র দ্বারা দর্শন করতে পারে না বা কর্ণের দ্বারা শ্রবণ করতে পারে না, কৃষ্ণ তাঁর শুদ্ধ, স্বচ্ছ ইন্দ্রিয়ের দ্বারা সেই আত্মাদের দর্শন করতে থাকলেন। দুঃখ হলেও তিনি শোকে কাতর হলেন না। সমস্ত রাষ্ট্রের যে দুঃখ, তাঁর একা শোক করে কী লাভ? বুদ্ধিকে তিনি গুণের দিকে নিবৃত্ত করলেন। গুণময় পদার্থ থেকে তিনি চেষ্টা করলেন নির্গুণ তত্ত্বের সমীপে পৌঁছোতে।
আবার এল রাধার এসএমএস: ‘কেমন আছ? ফিরে এসো তোমার রাধার কাছে।’ ধ্যানে নিমগ্ন মনটা বিনষ্ট হল। জনহীন কুরুক্ষেত্র প্রান্তর যেন জেগে উঠল। গান্ধারীর শতপুত্র রণভূমিতে রক্তাপ্লুত পড়ে রয়েছে। একাদশ অক্ষৌহিণী সেনানায়ক দুর্যোধন কর্তিত কদলি বৃক্ষের মতো পড়ে রয়েছেন। পড়ে রয়েছেন কুশলী ধনুর্ধর মহাবলী কর্ণ। শায়িত দুঃশাসন। ভীম তার বক্ষ চিরে রেখেছে। সেখানে এখনও শকুনের দল চক্রাকারে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অতুল তেজস্বী অভিমন্যুর মস্তক ক্রোড়ে নিয়ে ক্রন্দন করছে উত্তরা।
সমগ্র ভারতবর্ষ বীরোচিত শয্যায় শায়িত। গান্ধারীর শব্দবাণ হাওয়ায় ভাসছে। এই যুদ্ধের যাবতীয় সংহারের একমাত্র দায়বদ্ধতা কৃষ্ণের। তিনি উপেক্ষা করেছেন বিবদমান কৌরব এবং পান্ডবদের মধ্যে আনীত সন্ধির প্রস্তাবকে। বহু অনুচর ও সৈন্য তাঁর ছিল। কালকে তিনিই ঠেলে দিয়েছেন অনিবার্য যুদ্ধের দিকে। তাঁরই কারণে আজ ভরত বংশে নারীরা বিলাপ করছে। সৌপ্তিকপর্বে ব্যাপ্ত হাহাকারে দাঁড়িয়ে তিনি গান্ধারীর দিব্যদৃষ্টিকে ফাঁকি দিতে পারেননি। অভিশাপের করাল ছায়া এখন তাঁর দেহ ও মনে। যদুবংশ নিজেদের মধ্যে কলহ করে বিনাশপ্রাপ্ত হবে। অনাথের ন্যায় মৃত্যুবরণ করবেন তিনি—স্বয়ং রাধাস্বামী। মোবাইল স্ক্রিনে অর্নিবাণ অগ্নিশিখা। কবি, দার্শনিক মহাত্মা ব্যাসদেবকে বড়ো প্রয়োজন তাঁর, তিনি আর্ত। প্রেমহীন মৃত্যু-প্রতীক্ষায় উদ্বেল কৃষ্ণ।
২. যুধিষ্ঠিরের প্রাথমিক পাপবোধ
রাজপথে নাগরিকেরা বিজয়ী পাণ্ডবদের সংবর্ধিত করেছিল। সেই বিজয়-বাহিনীরও অগ্রদূত সারথি ছিলেন কৃষ্ণ। তাঁর তুল্য দক্ষ অশ্বারোহী ছিলেন একমাত্র শল্য, যুধিষ্ঠিরের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা কর্ণের সারথি। পরশুরামের গান্ডীবও ছিল কর্ণের কাছে। কলবুক খুলে কৃষ্ণের নম্বরে ছোঁয়ার আগে পিছলে গেল কর্ণ। দানবীর কর্ণ শত্রুকেও বিমুখ করতেন না, নিজেই যুধিষ্ঠিরকে দিয়েছিলেন। কখনো ডায়াল করা হয়নি। কুরুক্ষেত্রের কমেন্ট্রি বক্স থেকে সঞ্জয় বার বার ধরছিলেন যুধিষ্ঠিরকে। তিনি তখন সবে কর্ণের বাণের তোড় থেকে রক্ষা পেয়েছেন। শ্রুতকীর্তীর রথে চড়ে কর্ণের পরাক্রম দেখছিলেন। সঞ্জয়কেও মিথ্যা বলেননি। আসলে মিথ্যে তো ক্ষত্রিয়ের ধর্ম। আর যুদ্ধ এবং ক্ষত্রিয়ধর্ম পালনে তিনি কখনোই একনিষ্ঠ ছিলেন না। তিনি চিরকালই স্বাধ্যায় ও যাগযঞ্জে ব্যাপৃত থেকেছেন। অর্জুন এবং সখা কৃষ্ণের উপর নির্ভর করে তিনি অংশগ্রহণ করেছিলেন কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে। নিদ্রা তাঁর বড়ো প্রিয়, সুখাসনে বসে তিনি নানাবিধ কল্পনাও করতে ভালোবাসেন। এখনও যেমন ভাবছেন পদব্রজেই স্বর্গে আরোহণ করবেন। বাকি ভ্রাতারা এবং দ্রৌপদী বিনা বাক্যব্যয়ে তাঁকে অনুসরণ করবে। দুর্মর, গহন পথ, বনাঞ্চলে কীটপতঙ্গের খেলা, প্রস্রবণ কতদিন উপভোগ করেননি। রাজনীতিতে তাঁর স্বাভাবিক অলসতা রয়েছে। কিছুটা আত্মধিক্কারেও তিনি জর্জরিত। বরাঙ্গনাদের পেলব নৃত্যকলা, পদ্যরচনা, গীতবাদন তাঁকে এখনও আকর্ষণ করে। জীবনকে তিনি সবচেয়ে উপভোগ করেন দ্যূতক্রীড়ায়। সেই ভয়ংকর আত্মবিনাশকারী খেলা মহাভারতের যুদ্ধের অন্যতম হেতু। চতুর কেশবই একমাত্র যুধিষ্ঠিরকে নিয়ন্ত্রণ করেছেন। ধ্যান ও যোগশিক্ষা তো কেশবের কাছেই।
কৃষ্ণের নম্বর ডায়াল করলেই টি-টি আওয়াজ আসছে। যাদবকুলের ধ্বংস কি অনিবার্য হয়ে উঠেছে? সেই জ্যোতির্বিদ এখনও কারাগারের নিরন্ধ্র অন্ধকারে বন্দি। দুর্যোধনের অত্যন্ত প্রিয় সেই বৃদ্ধ। প্রবাদপ্রবচন মানেন না, সংস্কার-শাস্ত্র কিছুই মানেন না। সর্বোপরি অস্বীকার করেন ‘কৃষ্ণের ঈশ্বরতত্ত্ব’। চার্বাক মুনির আশ্রমেও যেতেন দুর্যোধন। ‘ভস্মীভূতস্য দেহস্য পুনরাগমনং কুতাঃ।’ ফিরে আসা নেই, জন্মান্তর নেই। স্বর্গ, নরক কিছুই নেই। এই দেহ মৃত্যুর পর মিশে যাবে মৃত্তিকায়। মাতুল শকুনির সাহচর্যে দুর্যোধনের পরিচয় হয়েছিল চার্বাকের সঙ্গে। নব্য যুবকদের কাছেও ইনি প্রিয় হয়ে উঠেছেন। বন্দি বৃদ্ধের নাম অর্কজ্যোতি। চার্বাক
গুরুকুলের একজন প্রধান অধ্যাপক। কৃষ্ণকে অমান্য করেন। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের জন্য গান্ধারীর মতো ইনিও প্রত্যক্ষ দায়ী করেছেন কেশবকে। এই মহাযুদ্ধে অস্ত্র ব্যবসায়ীদের ব্যাপক বিক্রিবাটা হয়েছিল। যাদবেরা নিজেদের কর্ম থেকে চ্যুত হয়ে অস্ত্র ব্যাবসায় নিযুক্ত হয়েছিল। কৃষ্ণ তাঁরই সংশপ্তক বাহিনী দুর্যোধনকে অর্পণ করে ব্যক্তিগত প্রাপ্তিলাভ করেছিলেন প্রচুর। তিনি একদিকে গীতার সৃষ্টিকর্তা, আর অন্যদিকে স্বার্থ ব্যতীত কিছুই করেন না তিনি এমন অপশ্রুতি রয়েছে। যুধিষ্ঠির কেশবের নিন্দা কখনো শ্রবণ করেন না। কলি যুগের প্রারম্ভে নাকি এসবই ঘটবে। ঈশ্বরের অস্তিত্বে আসবে সংশয়। স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণেরও মৃত্যু ঘটবে নিষাদের হাতে। তিনি গো-হত্যা, প্রাণীনিধন নিষেধ করেছেন। প্রজাদের নিরামিষ আহার বাধ্যতামূলক হয়েছে। সমগ্র উত্তর ভারত তাঁর বশ্যতা স্বীকার করেছে। ধর্ম, সংস্কৃতি, সাহিত্য, ইতিহাসে তিনিই একমাত্র স্মর্তব্য। কিন্তু শিকার নিষিদ্ধ হওয়ায় ব্যাধশ্রেণি ওঁর উপর ক্ষুদ্ধ। গোদুদ্ধ এদের অপ্রিয়। এ ছাড়া সবুজ সবজি এবং দুগ্ধও অগ্নিমূল্য। সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। যুদ্ধের প্রভাবে উৎপাদন নিন্মগতি। জমি উর্বরতা হারিয়েছে। বৃষ্টি নেই। ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা ভঙ্গুর অবস্থায় গিয়ে পৌঁছেছে। হস্তিনাপুরের অদূরের প্রান্তিক রাজ্যগুলিতে বিদ্রোহের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দ্বারকা, মথুরায় সাধারণ প্রজারা কৃষ্ণের উপর অসম্ভব ক্ষুদ্ধ। তিনি নাকি ভুলপথে চালিত করেছেন রাজ্যকে। রক্তক্ষয়ী এই যুদ্ধের এর অব্যবহিত পরেই রাজকোষ প্রায় শূন্য। উন্নয়ন খাতে ব্যয় বলতে কিছুই করেননি কৃষ্ণ। উগ্রসেন কৃষ্ণের নিযুক্ত কাষ্ঠপুত্তলিকা ব্যতীত কিছুই নয়।
দুর্বল যুধিষ্ঠির এসব পাপচিন্তাকে আর প্রশ্রয় দিলেন না। তিনি নরকগামী হতে চান না।
যুধিষ্ঠির উচ্চারণ করলেন, তিনি অর্থাৎ কৃষ্ণই সত্য, পরম পবিত্র, মঙ্গলময়। তিনি অবিনাশী, অবিচল, অখণ্ড জ্ঞান স্বরূপ পরমব্রহ্ম। তিনি সৎ অসৎ দুই-ই। জগতের সমস্ত কাজ তাঁর শক্তিতেই সংঘটিত হয়।
৩. নাস্তিক্যদর্শন
কুরুক্ষেত্রের প্রান্তরে পার হয়ে শ্রীকৃষ্ণের রথ এখন হস্তিনাপুর অভিমুখে চলেছে। তিনি সেই বৃদ্ধ বন্দির সঙ্গে একান্তে কথা বলতে চান। নক্ষত্রেরও নাকি জন্ম-মৃত্যু রয়েছে। ওদেরও পরিবর্তন হয়। চিরদিন উজ্জ্বল নয়। সূর্য দেবতা নন, মাঝারি একটি নক্ষত্র মাত্র। বিবাহের পূর্বে কুন্তী সন্তানসম্ভবা হয়েছিলেন নিজের চরিত্রের সাময়িক স্খলনের কারণে। সূর্যরশ্মি থেকে কোনো যৌনমিলন সম্ভব নয়। এ সবই ব্যাসদেবের বন্ধুর কল্পনা।
তপস্যা ও ব্রহ্মচর্যের দ্বারা ব্যাসদেব মহাভারত নামক এক মহাগ্রন্থ রচনা করে চলেছেন। অনুলিখনের দায়িত্বে রয়েছেন শ্রীগণেশ। বৈদিক, লৌকিক সমস্ত বিষয় এই গ্রন্থে রয়েছে। এই গ্রন্থে রয়েছে বেদাঙ্গ-সহ উপনিষদ, দেবাদির ক্রিয়াকলাপ, ইতিহাস, পুরাণ, পৃথিবী-চন্দ্র-সূর্যগ্রহ-নক্ষত্রাদির বর্ণনা। ঋক্-সাম-যজু-অথর্ববেদ, অধ্যাত্ম, ন্যায়, শিক্ষা, অনুশাসন, বিবিধ জাতি, লোক ব্যবহার, সঞ্জয়-কৃত কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের প্রাত্যহিক ধারাবিবরণী এবং শ্রীকৃষ্ণের অনির্বচনীয় মহিমাকীর্তন। ব্রহ্মা ব্যাসদেবকে যতই তত্ত্বঞ্জানসম্পন্ন মহাখ্যাতি বলুন-না কেন, এই মহতী কাব্যও এতটা জনশ্রুতি পেত না যদি-না সেখানে কেশবের মাহাত্ম্য অনুপস্থিত থাকত। তিনিই স্বীকৃতি দিয়েছেন এখনও বহমান নিত্যদিনের ইতিহাস লিপিবদ্ধ মহাভারকে পঞ্চম বেদ হিসেবে। ব্যাস চেয়েছিলেন, এটি পাঠ করবেন শূদ্র ও নারীরা। কৃষ্ণই তো ভারতবর্ষের নিন্মবর্গের অগণিত মানুষের প্রতিনিধি। ফলে তিনি স্বীকৃতি দেওয়ায় এই মহাগ্রন্থ পাঠে প্রকৃত পুণ্য লাভ হয়। ব্যাসদেবের প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতাকেও সূর্যের মতোই নস্যাৎ করতে চেয়েছিলেন কারাগারের বন্দি। নাস্তিক্যদর্শনের প্রবক্তা ইনি। মহাভারতে অন্তর্ভুক্ত হতে চান কারণ কালের গতিপ্রকৃতি নাকি চার্বাকের নিয়ন্ত্রণে। ব্যাসদেবও সাক্ষাৎ করেছিলেন। আজ কৃষ্ণ এসেছেন কারাগারে।
৪. শ্রীরাধিকার অনুরাগ স্মৃতি
শ্রীরাধা রতিক্রিয়ার হৃদয়ে যে-আনন্দের রেশ উৎপন্ন হয় সেখান থেকে বললেন, ‘হে যদুনন্ধন! চন্দনাপেক্ষাও সুশীতল তোমার করদ্বারা মদনের মঙ্গলকাসতুল্য আমার এই পয়োধরে মৃগনাভি পত্রলেখা অঙ্কিত করো।’ স্বাধীনভর্তৃকা রাধা। তিনি সব দূরত্ব আড়াল করে কৃষ্ণের কোলে এসে বসেছেন। যমুনায় নৌকাবিহার চলেছে। মাঝি ক্রুদ্ধ, সে তো আর যদুনন্দনকে চেনে না। বইঠা হাতে নিয়ে সে অন্য দিকে তাকিয়ে রয়েছে। চুম্বনে চুম্বনে রাধার চোখের কাজল মুছে গেছে। ভ্রমরসাদৃশ অবস্থা চূর্ণকুন্তলের। এবার সরস সুন্দর জঙ্ঘাদেশে কৃষ্ণের হাত খেলা করছে। রতি উন্মুখ রাধার জঙ্ঘাদেশে যে ঘর্ম্য রয়েছে তা তিনি জিহ্বা দিয়ে লেহন করছেন। আরও আরও শিউরে উঠেছে রাধা। একসময় মনে হয়েছিল, কথিত সময় তো অতিক্রান্ত হল, কই তিনি তো এলেন না। সখিগণ বোধ হয় বঞ্চনাই করেছে। কৃষ্ণের কাছে কোনো সংবাদই পৌঁছোয়নি। আসলে তখন তো চলভাষ ছিল না। ক্ষণে ক্ষণে তাঁর অদর্শনে মনে হত ‘মম বিফলমিদমম্লমপি রুপযৌবনম্’। সখী কলহান্তরিতা এসে বলেছিল, ‘রাতিসুখসারেগতমভিসারে মদনমনোহরবেশম্’। হে সখী, তোমার হৃদয়েশ্বর মদনমনোহর বেশে রতিসুখসারভূত অভিসারে গমন করেছেন। নিতম্বিনী তুমি গমনে বিলম্ব কোরো না। ‘পীনপায়োধর-পরিসর মর্দন-চঞ্চল করযুগশালী’। তোমার পীনপয়োধর পরিসর মর্দনের জন্য তাঁর করযুগল চঞ্চল হয়ে উঠেছে। সখী খন্ডিতা যোগ করল আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ‘ধীরসমীরে যমুনাতীরে বসতি বনে বনমালী।’ ধীর সমীর সেবিত যমুনাতীরে সেই বনমালী বনান্তে অপেক্ষা করছে। রাধার তখনই মনে হয়েছিল ‘তোমার অভিসারে যাব অগম পারে।’ তাঁর হাড়-মজ্জার ভেতর দিয়ে বাজতে থাকত সেই আহ্বান। আহ্বানের বাঁশি আকুল করে তুলত। জীবন আচ্ছন্ন করা সেই বাঁশি। ঝড় বৃষ্টি বিদ্যুৎচমক উপেক্ষা করে, আয়ান ঘোষের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেও রাধা গেছে। ‘ওই যে বাজিল বাঁশি, বলো