Discover millions of ebooks, audiobooks, and so much more with a free trial

Only $11.99/month after trial. Cancel anytime.

ধ্বংস নগর
ধ্বংস নগর
ধ্বংস নগর
Ebook283 pages1 hour

ধ্বংস নগর

Rating: 5 out of 5 stars

5/5

()

Read preview

About this ebook

অশুভ এক দর্শন বুকে করে বয়ে এনে দেশের মাটিতে পা রাখেন জুবায়ের খান। মনে মনে আঁকতে থাকেন ভবিষ্যৎ ওলট পালট করে দেবার ভয়ঙ্কর এক খ্যাপাটে ছক। দাবার গুটি হিসেবে বেছে নেন দিমিত্রি ও আব্বাস শেখের মতো অন্ধকার জগতের মানুষদের, আর ব্যবহার করতে শুরু করেন নিশি ও পরিমল বাবুর মতো নিরপরাধ কয়েকজনকে। ক্রুর এক অহংবোধ দিয়ে তিনি প্রমাণ করেই ছাড়বেন তার পাগলাটে দর্শন, 'পৃথিবী শুধুই যোগ্যদের জন্যে। অযোগ্যদের শারীরিক মুক্তি ছাড়া যোগ্যদের এগোনো সম্ভবপর নয়, উন্নতিও অসম্ভব।' অন্ধকার এই দর্শনকে ঘিরে মিনহাজ রহমানের মৌলিক থ্রিলার 'ধ্বংসনগর'।

LanguageBengali
PublisherMinhaj Rahman
Release dateJan 1, 2024
ISBN9798223371595
ধ্বংস নগর

Read more from Minhaj Rahman

Related to ধ্বংস নগর

Related categories

Reviews for ধ্বংস নগর

Rating: 5 out of 5 stars
5/5

1 rating0 reviews

What did you think?

Tap to rate

Review must be at least 10 words

    Book preview

    ধ্বংস নগর - Minhaj Rahman

    স্বত্বঃ লেখক

    সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। লিখিত অনুমতি ছাড়া এই বই বা বইয়ের যে কোন অংশ যে কোন উপায়ে পুনরুৎপাদন করা যাবে না।

    সব চরিত্র কাল্পনিক।

    বেআইনি উপায়ে না ছড়িয়ে বই এবং ইবই কিনে পড়ুন, লেখক ও প্রকাশককে নতুন বই প্রকাশে উৎসাহিত করুন।

    উৎসর্গ

    আব্বা ও আম্মা

    প্রিয় পাঠক/পাঠিকা,

    গল্প শুরুর আগে একটি ছোট্ট অনুরোধ। আপনারা আপনাদের মুঠোফোন থেকে অড্রে হেপবার্নের কণ্ঠে গাওয়া মুনরিভার গানটি একবার শুনে নিবেন। ধন্যবাদ।     

    -লেখক

    Walls have ears

    Doors have eyes

    Trees have voices

    Beasts tell lies

    Beware the rain

    Beware the snow

    Beware the man

    You think you know.

    -Catherine Fisher

    (Welsh Poet)

    বাইশে মে

    নিশি খুব সাবধানে মাথার পেছনে রক্তে ভেজা অংশটাতে আলতোভাবে আঙ্গুল দিয়ে স্পর্শ করে। সাথে সাথে তীক্ষ্ণ একটা যন্ত্রণা অনুভব করে সে। ঘাড়টার পাশ থেকে ক্রমাগত রক্তপাত হচ্ছে। এই মুহূর্তে জ্ঞান না হারানোর একটা আপ্রাণ চেষ্টা কাজ করছে তার মধ্যে। সামনের বন্ধ ভারি কাঠের দরজাটার দিকে তাকিয়ে কিছুটা হাঁপাচ্ছেও সে। কোনমতে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে হেলান দিয়ে বসে আছে। হাতের কোল্ট .৪৫ রিভলভারটা দরজার দিকে তাক করে রাখা। তার জীবনের প্রথম আগ্নেয়াস্ত্র। সম্ভবত শেষও। রিভলভারটার শীতল বাটটির ঠাণ্ডা অনুভূতিটা কিছুটা হলেও তাকে শান্ত রাখছে। আবার একই সাথে তার সম্বল আর একটা মাত্র বুলেট, এই চিন্তাটাও তাকে উত্তেজিত করে তুলছে বার বার। এই মুহূর্তে, সে নোংরা জঞ্জালে ভর্তি একটা স্টোররুমে আটকা পড়ে আছে। ফ্যাক্টরি ফ্লোরের জঞ্জাল রাখার স্টোররুম এটি। ভারী কাঠের ভাঙ্গা বাক্স, ক্যামিকেল সাপ্লাইয়ের প্লাস্টিকের গ্যালন পুরোন মডেলের জং ধরা ফিলার মেশিন। ভেজা ছাতা পড়া কাঠের গন্ধের সাথে জং ধরা লোহা আর ক্যামিকেলের গন্ধ মিশে অদ্ভুত রকমের ভ্যাপসা হয়ে আছে স্টোররুমটা। দেয়ালের একপাশে ছোট্ট একটা জানালার মরচে ধরা শিকের ফাঁক দিয়ে এক ফালি চাঁদের  আলো এসে পড়েছে তার নগ্ন পায়ে। দৌড়ে ঢোকবার সময় কখন স্যান্ডেল খুলে গিয়েছে খেয়াল নেই তার।

    দূরে কোথাও থেকে আহত জখম এক মানুষের অসুস্থ যন্ত্রনা ভরা চিৎকার ভেসে আসছে-

    আব্বাআআআ জান ...দেখিয়েয়েয়ে মুঝে ...আপকি গুনাহ আযাব বান গায়ি মেরে লিয়ে...

    লোকটা বেশিক্ষণ আর টিকবে না। শেষ যখন দেখেছে রক্তে ভেসে যাচ্ছিলো পুরো শরীর।

    পুরনো পচন ধরতে থাকা ভারি কাঠের দরজাটার ওপাশ থেকে একটা জান্তব পশুর গোঙানোর আওয়াজ ভেসে আসছে। পশুটা তার সমস্ত জিঘাংসা এক করে দরজার এপাশে আসার একটা অমানুষিক চেষ্টা করে যাচ্ছে। ভারী একটা কিছু দিয়ে সর্বশক্তি দিয়ে বারবার আঘাত করছে সে দরজাটার উপরে।

    একটা।

    আর একটা বুলেট শুধু বাকি রয়ে গেছে নিশির হাতের রিভলবারটিতে।

    এই একটা বুলেট নির্ধারণ করবে নিশির নিয়তি আজ রাতে।

    কিছুদিন আগে...

    মোবাইলের বিরক্তিকর শব্দে নিশির ঘুম ভাঙলো। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে আসছে।বারান্দায়  শান্ত সোনালি রোদ গ্রিলের  ফাঁক দিয়ে এসে মেঝেতে পড়ছে।

    নতুনবাসায় আসবার পর এই প্রথম খুব ভালো ঘুমালো সে। এই বাসাটায় সর্বক্ষণ বাইরে থেকে ট্রাফিক জ্যামের হর্ণ আর চেঁচামেচিরশব্দ ভেসে আসে। শুধুমাত্র নতুন অফিসটা কাছে হওয়ার কারণে বাসাটা নিতে রাজি হয়ে যায় সে। আজকের বিকেলটা কেমন যেন শান্ত। বাইরে থেকে শুধু একটা দুটো রিকশার টুং টাং আওয়াজ ভেসে আসছে। এখন দরকার গরম এক কাপ চা নিয়ে চুপচাপ বারান্দায় বসে বসে সন্ধ্যা হতে দেখা     দ   অফিস থেকেও হতে পারে। আজ অফিস থেকে  তারএকটা কল আসার কথা। জয়েনিং এর পরের কিছু কাগজপত্রের কাজ বাকি রয়ে গেছে। ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ক্রুদ্ধ একটা গলার আওয়াজ ভেসে এলো ।

    -কী হলো, এখন তো  দেখি ফোনটা পর্যন্ত ধরো না । নাকি কারো সাথে আছো?

    সুন্দর বিকেলটার উপর কে যেন এক বোতল কালি ঢেলে দিল। ক্রুদ্ধ স্বরটার আওয়াজে, বিরক্তিতে নিশির চোখমুখ কুঁচকে গেলো। মাসুদ ফোন করেছে। মাত্র কয়েকদিন হল তাদের সেপারেশন হয়েছে। মাসুদ জানে পরিচিত নাম্বার দেখলে সে রিসিভ করবে না। এ কারণে অন্য নাম্বার থেকে সে ফোন করেছে। বর্জিত পুরুষ মানুষের ইগো যে এতটা বিরক্তিকর নিশি তা আগে বোঝেনি। পুরো ব্যাপারটা থেকে তার মন উঠে গিয়েছে। প্রচণ্ড একটা তিক্ততা থেকে সংসারটা ছেড়েছে সে। বহুদিন শুধুমাত্র বাবুর কথা ভেবে নিজেকে আঠার মত একটা ভাঙাচোরা নোংরা সম্পর্কে জোর করে আটকে রেখেছিল সে। নইলে সাত বছরের একটা ছোট্ট শিশুকে ছেড়ে আসার মত হৃদয়হীন সিদ্ধান্ত নিশির জন্যে খুব কঠিন ছিলো। কিন্তু তার কিছু করার ছিল না। মাসুদের নোংরামিগুলো এভয়েড করা দিন দিন কঠিন হয়ে উঠছিলো তার জন্যে।

    -কী হলো! কথা বলছো না যে?

    -কী শুনতে চাও?

    -শুনলাম নতুন বাসা নিয়েছ বলে?

    -হম

    -তুমি শুরু করেছো কী বলোতো? তুমি আমার দিকটা না ভাবো, বাবুর দিকটা তো ভাববা? তুমি এত সেলফিস আচরন করতেছ কেন?

    -আমি আমার আর বাবু দুজনের কথা চিন্তা করেই এই ডিসিশন নিয়েছি।

    -তোমার নতুন বাসার এড্রেসটা কী?

    -সেটা তোমাকে জানানোর খুব একটা প্রয়োজন বোধ করছি না।

    -কেনো প্রয়োজন বোধ করছ না? আমি আসলে কী হবে? তোমার নতুন  প্রেমিকের সমস্যা হয়ে যাবে?

    নিশি খুব সাবধানে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। এখন কোন কিছু বলা মানেই মাসুদকে আরো রাগিয়ে দেওয়া। কুকুরের মত খিস্তি শুরু করবে। সেপারেশনের ধাক্কাটা সে এখনও হজম করতে পারেনি। কখনো রাগ কখনো কাকুতি-মিনতি কখনো তার বাসায় গিয়ে হইচই করে সে যে একজন দুর্বল মানসিকতার মানুষ শুধু সেটাই প্রমাণ করেছে। তার এসব আচরণে নিশির মনটা আরো শক্ত করে দিয়েছে ।একবার মন উঠে গেলে মন বসানো বড় মুশকিল।

    -নিশি আমার মনে হয় আমাদের পুরো ব্যাপারটা নিয়ে মুরুব্বিদের সাথে বসা উচিত।

    -আমার মনে হয় না।

    -কেন মনে হয় না?

    -তুমি কি আসলেই চাও আমি তোমার বাবা-মার সামনে পুরো ব্যাপারটা এক্সপ্লেইন করি? কেন আমি সব ছেড়ে চলে এসেছি?

    ওপাশ থেকে মাসুদ চুপ হয়ে যায়। একটু থেমে সে কাতর স্বরে বলে,

    - ইউ নো আই ক্যান চেইঞ্জ...

    -আই নো ইউ ক্যান... আমিও চাই তুমি ব্যাপারটা থেকে বের হয়ে এসো।  বাট ইটস টু লেইট ফর আস মাসুদ। আমি ফোনটা রাখলাম।

    নিশি সাবধানে ফোনটা কেটে দিলো। বুকের কোণ থেকে ছোট্ট একটা দীর্ঘনিশ্বাস বের হয়ে এলো। সংসার ছেড়ে আসার পর নিশির একটা সমস্যা প্রবল হয়ে উঠেছে। সময় অসময় বাবুকে বুকে চেপে ধরার ইচ্ছাটা হাহাকার করে ওঠে। কিন্তু তার কিছুই করার ছিল না। মাসুদের নোংরামিগুলো  আর নিতে পারছিলো না সে। একজন পরাজিত মানুষের থেকেও বিরক্তিকর হলো একজন পরাজিত পারভার্ট শ্রেণীর মানুষ। ফোনটা রেখে বারান্দায় এসে চুপ করে বসে সে। দূর থেকে আসরের আজানের ধ্বনি ভেসে আসছে। নিস্তব্ধ বিকেল। নতুন বাসা। নতুন চাকরি। নতুন করে একাকীত্ব। শুধু বাবু নেই। ছোট্ট শুভ্র বাবু। জগতের সমস্ত জটিলতা মুক্ত বাবু। এখন শুধু বাবু কাছে থাকলে তার আর কিছু লাগতো না।

    Whoever fights monsters should see to it that in the process he does not become a monster.

    -Friedrich Nietzsche

    বাইশে মে

    রাগে-দুঃখে জুবায়ের খান পশুর মত জান্তব চিৎকার করে ভারী কাঠের দরজাটার উপর আঘাত করলেন।  সামান্য একটা ডিভোর্সি মিডল ক্লাস মাগীর  জন্য তার পুরো আর্টটা এভাবে ভেস্তে যাবার উপক্রম হবে তিনি স্বপ্নেও ভাবেননি। এদিক ওদিক তাকিয়ে কোণার দিকে জং পড়া একটা শাবলের উপর চোখ পড়ল। একটু দূরে আব্বাস শেখ এখনো আব্বাজান আব্বাজান করে যাচ্ছে। এই হারামির দিকে তাকিয়ে এখন লাভ নেই। এই বিহারী গাদ্দারের বাচ্চা খুব তাড়াতাড়ি তার বাপের সাথে মিলিত হতে যাচ্ছে। খোঁড়াতে খোঁড়াতে গিয়ে শাবলটা তুলে নিলেন। এটা দিয়েই কাজ চালাতে হবে।  শাবলটা মাথার উপরে তুলে ধরে বললেন, মিস নিশি অ্যাপিয়ারেন্স এবং মেধা এই দুয়ের কম্বিনেশন খুব  রেয়ার। এই দুটোই  আপনার আছে। নইলে সামান্য একাউন্ট রিপোর্ট থেকে আপনি দুয়ে দুয়ে চার করে ফেলেছেন। আফসোস আমার কোম্পানিতে আজই আপনার শেষ দিন। এই বলে সর্বশক্তি দিয়ে তিনি দরজার উপরে আঘাত করলেন। একটু থেমে আবার বললেন, আসলে অতিরিক্ত স্মার্ট এমপ্লয়ী হায়ার করাটাই বোকামি। হাঁপাতে হাঁপাতে শাবলটা তুলে আবার বসিয়ে দিলেন দরজাটার উপরে। পুরনো কাঠ কোথাও ফাটতে শুরু করেছে। মেরেই ফেলবেন কুত্তিটাকে আজকে।

    The Scariest Monsters are the ones that lurk within our soul.

    -Edgar Allan Poe

    খুব চাপা ভোঁতা গর্জন করতে করতে বোয়িং ৭৮৭ টা একটা বিশাল মহাজাগতিক সরীসৃপের মতো বাতাস কেটে দ্রুত এগিয়ে চলেছে। বায়ুচাপ নিয়ন্ত্রিত শীতল কেবিনটার ভেতরের সমস্ত বাতি নিভিয়ে অন্ধকার করে দেয়া হয়েছে। শুধু বাইরে থেকে শক্তিশালী ইঞ্জিনের একটানা চাপা আওয়াজ ভেসে আসছে। বেশিরভাগ যাত্রী ঘুমুচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত আকাশ যাত্রা বেশ দীর্ঘ ও বিরক্তিকর। যদিও তিনি সরাসরি যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসছেন না। আসার পথে এমস্টারডামে ছোট্ট একটা কাজ ছিলো তার। দিন তিনেকের জন্য থেমেছিলেন সেখানে তিনি। তাই কিছুটা ক্লান্ত বোধ করলেও বিরক্তবোধ করছেন না। আপাতত প্লেনের জানালার কাঁচ দিয়ে শূন্য দৃষ্টিতে বাইরের অন্ধকার দেখছেন।

    একটানা, একঘেঁয়ে অন্ধকার।

    তিনি হাত বাড়িয়ে সামনের মিডিয়া স্ক্রিনটা স্পর্শ করলেন। এয়ারলাইন্সের মিউজিক লাইব্রেরির কালেকশনে অড্রে হেপবার্নের এর অরিজিনাল মুনরিভার গানটা আছে দেখে তিনি বিস্মিত বোধ করলেন। বহু আগে শুনেছেন তিনি এই গানটি। তার মা গুনগুন করতেন। অতীত আর ভবিষ্যতের দিকে একসাথে তাকিয়ে থাকবার আইকনিক গান এটি। তিনি গানটি সিলেক্ট করতেই অড্রে হেপবার্নের এর কিন্নর কণ্ঠ ভেসে এলো-

    Moon river, wider than a mile

    I'm crossing you in style some day

    Oh, dream maker, you heart breaker

    Wherever you're going, I'm going your way

    দীর্ঘ কয়েক যুগ পর দেশে ফিরছেন তিনি।

    Enjoying the preview?
    Page 1 of 1