অন্যপ্রেম
()
About this ebook
বর্তমান সমাজে সমকামিতা বা রূপান্তরকামীতা আর কোনো অপরাধ হিসাবে না দেখা হলেও, তা ভাল চোখে দেখা হয়ে না | তাই এই সকল মানুষজন খুব সহজেই বাকি সবার হাসির খোরাক কিংবা হয়রানির শিকার হয়ে থাকে । অনেক ক্ষেত্রে, সমাজের গ্রহণযোগ্যতার অভাব, সামাজিক লজ্জা এবং পরিবারে তাদের দূরে সরিয়ে রাখা ইত্যাদির কারণে, এই সব মানুষজন নিজেদেরকে সবার থেকে আড়াল করতে করতে এমন এক জায়েগায়তে গিয়ে উপস্থিত হয় যে সেখানে তারা শুধু প্রতারিতই হয়েনা, বরং তাদের ওপর অমানুষিক আঘাতও এসে পড়ে । সমস্ত আঘাত ও অপমান উপেখ্যা করে সেই পরিস্থিতি থেকে নিজেকে বার করে আনার গল্প – অন্য প্রেম ।
Spondon Ganguli
Spondon Ganguli has been working as an educator in a reputed CISCE school. He started his career as an educator in the field of ICT in 2000 and worked in various schools, both ICSE and CBSE. He is a life-long learner with a zest for experimenting and learning new things. His other areas of interest, apart from teaching computer science and programming, are painting and photography. Some of his stories and poems have been published in online magazines too. This book is his first work in the field of literature as a Novel. His other published books are - Forgotten Love Unforgotten Love (A collection of 22 poems) and Phira Asha (A Bengali Fiction on Gay relationship)
Read more from Spondon Ganguli
Phire Asha Rating: 0 out of 5 stars0 ratingsমনের অভিব্যক্তি Rating: 0 out of 5 stars0 ratings
Related to অন্যপ্রেম
Related categories
Reviews for অন্যপ্রেম
0 ratings0 reviews
Book preview
অন্যপ্রেম - Spondon Ganguli
স্পন্দন গাঙ্গুলি
Copyright © Spondon Ganguli 2022
কৃতজ্ঞতা
সর্বপ্রথম পরমেশ্বরের কাছে নতোমস্তক হয়ে আশীর্বাদ প্রার্থনা করি| আমার পরম সৌভাগ্য যে বাবা মায়ের সাহায্য, মার্গদর্শন ও আশীর্বাদ সব সময় আমি পেয়ে এসেছি।
আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই আমার সহধর্মিনী ও বন্ধু শ্রীমতি সোমাশ্রীর গাঙ্গুলিকে, যার সহযোগিতা আর নিরপেক্ষ মতামত আমাকে সব সময় সঠিক পথ দেখায়। এখানে একটা কথা বলতে চাই, যদিও সোমাশ্রীর আমার গল্পের বিষয়টি পছন্দের নয়, তবুও তার সাহায্য শুরু থেকেই আমি আমার প্রতিটি লেখায় পেয়ে এসেছি।
অতঃ পর কিছু বিশিষ্টজনের নাম উল্লেখ করবো, যারা আমার শুভাকাঙ্খী এবং আমি তাদের বন্ধুরূপে পেয়ে কৃতজ্ঞ| তারা শুধু আমাকে তাদের মতামত দিয়ে আমার এই উপন্যাসটি সম্পূর্ন করতে সাহায্য করেছেন তাই নয়, বরং আমার যাবতীয় ভুল ত্রুটি সংশোধন করার গুরুদায়িত্ত হাসিমুখে সময়-অসময় করে গেছেন, তাদের ব্যস্ততার মধ্যে থেকে সময় বার করে। এনারা হলেন - ডক্টর জনার্দন ঘোষ, শ্রী বিপুল বিকাশ মন্ডল, শ্রীমতি পাপিয়া ঘোষ, আর আমার বান্ধবী এবং সহপাঠী শ্রীমতি বুমা ব্যানার্জী দাস। আপনাদের সাহায্য ছাড়া এই বইটি কোনো ভাবেই বাস্তবায়িত হতে পারতো না। আপনাদেরকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ।
আপনাদের সকলের কাছে আমি কৃতজ্ঞ রইলাম আর আশা করবো আগামী দিনেও আপনাদের সাহায্যপ্রার্থী।
- লেখক
স্বীকারোক্তি
এই বইতে দেয়া দুটি কাহিনী সম্পূর্ণ মৌলিক ও আমার কল্পনা প্রসূত।। এ দুটি কাহিনীর সঙ্গে স্থান, কাল, চরিত্রে যারা রয়েছেন, তারা কেউ বাস্তবের নয়।। তারা সম্পূর্ণ কাল্পনিক চরিত্রে মাত্র।
এই কাহিনী দুটির দ্বারা কাউকে মানসিক ভাবে আঘাত দেওয়া আমার উদ্যেশ্য নয়।। তবুও কাকতলীয় ভাবে যদি কিছু মিলে যায়, তবে তা আমার ইচ্ছাকৃত নয়।। এরজন্য আমি সকলের কাছে প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিলাম।।
~ স্পন্দন গাঙ্গুলি
ভূমিকা
সমকামিতা কোনো অপরাধ নয়, সমকামিতা সমাজের কলঙ্ক বা ব্যাধি বা রোগও নয়, তবে এটা আলোচনার বিষয় সমকামিতা মানব সভ্যতার শুরু থেকেই ছিল না কী সমাজ-ব্যবস্থার কোনো জটিল অঙ্কের উপাদান। এটা কিন্তু এখন বহুবিদ জ্ঞাত যে সমকামিতা শুধু মাত্র রোমান বা গ্রীক সমাজ ব্যবস্থার অঙ্গ ছিল না বরং প্রাচীন ভারতীয় সমাজের একটি অঙ্গ ছিল যেখানে আমরা প্রচুর গল্প ও লোক কথা পাই যেখানে দুই পুরুষের মিলন বা দুই নারীর মিলন ও তাদের সন্তান ধারণের কথা উল্লেখ আছে | আবার গন্ধর্ব, কিন্নর এরকম আরও কিছু সমাজে উভয়কামিতা ও রূপান্তরকামী মানুষজনের কথাও আমার দেখতে পাই |
বর্তমান সমাজে সমকামিতা বা রূপান্তরকামীতা আর কোনো অপরাধ হিসাবে না দেখা হলেও, তা ভাল চোখে দেখা হয়ে না | তাই এই সকল মানুষজন খুব সহজেই বাকি সবার হাসির খোরাক কিংবা হয়রানির শিকার হয়ে থাকে | অনেক ক্ষেত্রে, সমাজের গ্রহণযোগ্যতার অভাব, সামাজিক লজ্জা এবং পরিবারে তাদের দূরে সরিয়ে রাখা ইত্যাদির কারণে, এই সব মানুষজন নিজেদেরকে সবার থেকে আড়াল করতে করতে এমন এক জায়েগায়তে গিয়ে উপস্থিত হয় যে সেখানে তারা শুধু প্রতারিতই হয়েনা, বরং তাদের ওপর অমানুষিক আঘাতও এসে পড়ে |
সবার থেকে ভয়ংকর ব্যাপার হল, কৈশোর (যৌবনের বয়ঃসন্ধি ) অবস্থায়ে যখন কোনো ছেলে নিজেকে সমকামী হিসাবে আবিষ্কার করে, তখন তারা না তো নিজেদের দিকটা পরিবারকে বোঝাতে পারে না তো পরিবারে সাহায্য পায়ে | এই মত অবস্থায়ে, তারা অনেক ক্ষেত্রে এমন লোকেদের প্রভাবে এসে পড়ে যেখানে তারা এদেরকে সম্পুর্ন ভুল পথে চলিত করে থাকে এবং শেষে যখন সেই বেক্তিটির দ্বারা মানসিক ও শারিরীক আঘাত এসে পড়ে তখন আর নিজে সামলে উঠতে পারে না | এর পরিণতি অনেক সময় এইই হয়ে যে অনেক নিষ্পাপ মন ভেঙে তছনছ হয়ে যায়।
গল্প - ১
ম্যাগনোলিয়া
(একটি পাহাড়ী ফুল)
গোড়ার কথা
এখন ঘড়িতে প্রায় সন্ধ্যে সাতটা বাজছে। চারিদিকে নিঝুম নিস্তব্ধতা গ্রাস করেছে। ধীরে ধীরে পারদ নামছে। এক শীতল বাতাসের পরশ পাওয়া যাচ্ছে। এটা একটা খোলা জায়গা, ছোট খাটো একটা মাঠ বলা যেতে পারে, যদিও বা পাহাড়ের একটু ঢালুর দিকে। সামনে বিস্তীর্ণ জলাশয়। তার ওপরে পাইনের উঁচু উঁচু গাছের সমূহ ধীরে ধীরে বেয়ে উঠেছে পাহাড়ের গা বেয়ে, আর আছে সারি সারি রনোডেনড্রন।
কালো আকাশের নিচে দুজন খোলা মাঠে বসে আছে। ঠিক পাশাপাশি নয় বরং একজন ওপর জনের পিঠে হেলান দিয়ে আছে। হঠাৎই একজন একটু ঘুরে বসলো, আর অপর জন তার বুকে মাথা রেখে তাকালো তার দিকে। আশেপাশে কিছু জংলি ফুলগাছ ও গাছগাছালি হয়ে আছে। আর আছে একটি ফুল গাছ, যেখানে কিছু ফুলের কুঁড়ি, যা আর একটু রাত হলে পরই ফুটবে। তারই একটা কুঁড়ি ছিঁড়ে নিয়ে, একজন অপর জনের গালে আলতো করে ঠেকলো।
-তুমি ধুপরি ফুলটাকে ফোটার আগেই ছিঁড়ে দিলে?
-কি নাম বললে?
-ধুপরি! কেন আগে শোনোনি নাকি এই নামটা?
-না, তবে বেশ মজার নাম তো। ধুপরি!
অপর জন হেসে জবাব দিল।
-কেন আগে কি কখনো এই ফুলগাছ দেখ নি?
-হ্যাঁ দেখেছি। একবার সিমলায় বেড়াতে গেছিলাম। ওখানেই দেখেছি।
-তবে এর আরও একটা নাম আছে আর একে নিয়ে একটা গল্পও আছে।
-কি নাম?
প্রথম জন বেশ আগ্রহের সাথে জিজ্ঞাসা করলো।
-ম্যাগনোলিয়া
-বাহঃ! বেশ সুন্দর নাম তো। আর কি গল্প বলছিলে যেন?
এই বলে অপর জন সোজা হয়ে বসলো এবার। তারপর সে উঠে দাঁড়ালো, সামনের ব্রিজটার দিকে এগিয়ে গেলো। প্রথম জনও এগিয়ে এলো ব্রিজের দিকে। দুজনে দুজনের হাত ধরে ব্রিজের ঠিক মাঝটায় এসে দাঁড়ালো। প্রথম জন দ্বিতীয় জনের মুখটা খুব যত্নের সাথে নিজের দুই হাতের মধ্যে বন্দি করে নিলো আর তার পর তার ঠোঁটে একটা চুমু খেলো। দ্বিতীয় জন তার পায়ের পাতায় ওপর একটু ভর দিয়ে উঠলো আর প্রথম জনকে একটু ঝুঁকতে হলো। তার পর প্রথম জন বললো,
-গল্প ঠিক নয়, তবে শুনেছি এই গাছে যখন ফুল আসে, তখন নাকি বিষধর সাপেরা আসে আর গাছটাকে জড়িয়ে ধরে। ঠিক এখন যেমন আমি তোমাকে জড়িয়ে ধরলাম।
-ধুর! তুমি সাপ নাকি?
-হতেও তো পারি! যেটা বলছিলাম। তা সেই সাপ নিজের উত্তাপ, জ্বালা যন্ত্রনা সব নিয়ে এসে উজাড় করে দেয় এই গাছটাকে। তার পর যখন সেই সাপটি গাছটাকে ছেড়ে চলে যায়, তখন এই গাছের ফুলগুলো কেমন যেন ফ্যাকাশে হয়ে হয় যায়। নিজের অস্তিত্বটাই হারিয়ে ফেলে।
আমার অবস্থাও এই ম্যাগনোলিয়া গাছের মতন হবে না তো?