Discover millions of ebooks, audiobooks, and so much more with a free trial

Only $11.99/month after trial. Cancel anytime.

Himalayer Giripothe
Himalayer Giripothe
Himalayer Giripothe
Ebook381 pages2 hours

Himalayer Giripothe

Rating: 0 out of 5 stars

()

Read preview

About this ebook

Everyone loves to travel or tour. But while the trip is thrilling, the memories stay within, for a long time. It is one such travelogue, the backdrop of which is the valley of the high Himalayan plateau between Ladakh and Himachal Pradesh, and the nine high altitude and dangerous mountain passes and the breathtakingly beautiful Sayok Valley and surrounded by unprecedented natural beauty, at an altitude of 14,000 feet, amidst the mountain ranges and, the brackish water lake Pangong. On the road from Leh to Manali, the rugged Baralacha, the 21 bend 'Gataloop' and the beautiful Jispa. And the 7500 kilometers of this journey, all covered in the self-driven family car. On completely unknown roads on the high Himalayan plateau. This travelogue is therefore a record of an exciting travel experience.

LanguageEnglish
Release dateDec 2, 2023
ISBN9788119368389
Himalayer Giripothe

Related to Himalayer Giripothe

Related ebooks

Travel For You

View More

Related articles

Reviews for Himalayer Giripothe

Rating: 0 out of 5 stars
0 ratings

0 ratings0 reviews

What did you think?

Tap to rate

Review must be at least 10 words

    Book preview

    Himalayer Giripothe - Manas Kumar Das

    হিমালয়ের গিরিপথে

    (মুম্বাই থেকে সড়ক পথে সূদুর কাশ্মীর লেহ লাদাখ হিমাচলের পার্বত্য পথে রোমাঞ্চকর ভ্রমণ কাহিনী)

    মানস কুমার দাস  

    জয় শ্রী কৃষ্ণ

    এই বইটি আমি আমার প্রিয় পুত্র শ্রীমান কৌশিক কে ভালবাসা এবং আশীর্বাদ সহ সমর্পণ করলাম। যার উৎসাহ ও উদ্দীপনার জন্যই আমাদের এই রোমাঞ্চকর ভ্রমণ বাস্তব হয়েছে।

    মানস কুমার দাস

    ভূমিকা

    লক্ষ্য স্বপ্ন নয়, স্মৃতি নিয়ে বিদায় নেওয়া। ছোটবেলায় পড়েছিলাম, ভ্রমণ, শিক্ষার একটি অংশ। বাস্তবে নিজের জীবনে সেই সত্য উপলব্ধি করলাম যেন। প্রায় সারা ভারতবর্ষ ঘোরার মাধ্যমে। তবে বলতে দ্বিধা নেই, দুর্গম হিমালয়ের সুউচ্চ পার্বত্য মালভূমির উপত্যকার পথে আমার এই রোমাঞ্চকর ভ্রমণের অভিজ্ঞতা প্রাপ্তির সবটুকুই আমার পুত্র শ্রীমান কৌশিকেরই (পাপাই) প্রাপ্য। চাকরি জীবনের পরে, যদিত্ত আমি আমার পরিবার সহ স্বচালিত নিজস্ব বাহনেই, দেশের একপ্রান্ত থেকে আর একপ্রান্তের বিভিন্ন সমুদ্রসৈকত, পাহাড়ী প্রদেশ, বিস্তির্ন গ্রাম্য পরিবেশের সমতলক্ষেত্রে, অথবা মরুভূমি অঞ্চলে ঘোরার সুযোগ ও অভিজ্ঞতা, বিগত ১৫ বছরে বহুবার হয়েছে। এক এক প্রদেশের এক এক রকম বিভিন্ন গোষ্ঠীর মানুষজন, তাদের সংস্কৃতি, প্রথা, আচার ব্যবহার, বা খাদ্যাভাস এর সাথে পরিচিত হবার সুযোগ হয়েছে, এবং অবশ্যই বিভিন্ন প্রদেশের বিভিন্ন প্রাকৃতিক শোভা ও সৌন্দর্য্য দর্শনের মনোরম অভিজ্ঞতা, এবং আমার পেছনে ফেলে আসা দেড় দশকে তার সুন্দর স্মৃতিচারণ করা, যা আমার কাছে এক শিক্ষারই অঙ্গ। আমাদের বর্তমান আবাসস্থল গুজরাতের আমেদাবাদ শহর থেকে প্রথমে কাছাকাছি, রাজস্থানের মাউন্ট আবু, গুজরাতের পোরবন্দর, ভূজ, দিউ দিয়ে শুরু করে, রাজস্থানের বাড়মের জেলা হয়ে জয়সালমের মরুভূমি অঞ্চল, যোধপুর ও জয়পুর সহ, মহারাষ্ট্রের মাথেরান, মহাবালেশ্বর, বা খান্ডালার পরে, সমগ্র গোয়া এবং তারপর কর্নাটক ও কেরলের সমুদ্রতটের ধার দিয়ে যেতে যেতে সেই রাজ্যের গ্রামীণ ভূখণ্ডের সাথে পরিচিতি। আলাপাজ্যুয়ার জলপথে ভ্রমণ সেরে রামেশ্বরমের সমুদ্রের ওপর বিষ্ময় ব্রিজ ঘুরে, কর্নাটকের ২৩ টি হেয়ার পিন বেন্ড ওয়ালা পশ্চিমঘাট পর্বতশ্রেণী অতিক্রম, আর সমতলে অতি সুন্দর রাজপ্রাসাদ, আর কেরলের চা বাগান সমৃদ্ধ ছবির মতন মুন্নার পাহাড়ের পরিবেশে ভ্রমণের সব অভিজ্ঞতা স্মরণীয় হয়ে থাকবে আমার কাছে সর্বদাই। আবার পূর্বের রাজ্য, আমার জন্মস্থান, পশ্চিমবঙ্গের উত্তরভাগে দার্জিলিং এবং সিকিমের পার্বত্য এলাকায় ভ্রমন, নিজেদেরই গাড়িতে, এসবই আমার পুত্র কৌশিকের উৎসাহ এবং উদ্দীপনায় এবং তার স্বচালিত বাহনে চড়েই, আমরা পরিবারের সকলে আনন্দের সাথে ভ্রমণ করেছি সব জায়গায়। কিন্তু এবারের এই সুউচ্চ হিমালয়ের সুউচ্চ, প্রায় ১১ হাজার থেকে ১৮ হাজার ফিট উচ্চতার মালভূমির দুর্গম সংকুল গিরিপথে, সম্পুর্ন এক অজানা প্রাকৃতিক পরিবেশে, নিজের গাড়ী চালিয়ে ভ্রমণ করা, এক আলাদা রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা নিশ্চিত ভাবেই। কাশ্মীরের কাশ্মীরের শ্রীনগর হয়ে, লাদাখের মালভূমির কারগীল, লেহ, হুন্ডার নুব্রা, প্যাংঙ্গঙ্, আর ফেরার পথে লেহ থেকে হিমাচলের জিসপা, মানালী, কুলু ভ্যালী, হিমালয়ের পর্বতশ্রেণীর ১০ হাজার থেকে ১৮ হাজার ফিট উচ্চতার দুর্গম পথ। ১১ হাজার ফিট উচ্চতার জোজিলা পাস্ থেকে ১৮ হাজার ফিট উচ্চতার খারডুংলা পাস, এবং এই ভ্রমণ পথের সর্বমোট নয়টি পার্বত্য গিরিপথ, যেগুলি বেশিরভাগই সমুদ্রতল থেকে, গড়পড়তা, ১৫ হাজার ফিটের বেশী উচ্চতায় অবস্থিত। হিমালয়ান রেঞ্জের এই সম্পুর্ন অজানা পার্বত্য পথে, খারডুংলা

    পাস, চাংলা পাস, টাংলাংলা পাস, বারালাচা পাস, অথবা ২৩ টি হেয়ার পিন্ বেন্ড সহ গাটালুপ সহ মোট প্রায় ৯ টি হিমালয়ের সুউচ্চ পার্বত্য গিরিবর্ত বা গিরিপাসের পথে পরিবার সহ নিজস্ব গাড়ীতে ভ্রমণ, তৎসহ জনস্কর রেঞ্জের সুউচ্চ সায়ক উপত্যকার দু তিনটি পার্বত্য সিন্ধু নদীর শাখা প্রবাহ পার হওয়া, এই সব কঠিন বিপদসংকুল ভূখণ্ডে ঠিক ভাবে গাড়ী চালিয়ে সফর করা, এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা এবং এর কৃতিত্ব, সম্পুর্ন ভাবেই আবার পুত্র কৌশিকের প্রাপ্য।

    হিমালয় পর্বতমালার উচ্চতার তিনটি স্তরের সর্বোচ্চ গ্রেটার হিমালয়ের গড় উচ্চতা ২০,০০০ হাজার ফিট এবং পর্বতশ্রেণীর মধ্যবর্তি হিমালয়, বা যাকে হিমাচল বলা হয়ে থাকে, সেই স্তরের পর্বতমালার গড় উচ্চতা ১২৫০০ ফিট থেকে ১৪৫০০ ফিট। আর হিমালয়ের এই অত্যন্ত দুর্গম ও রোমাঞ্চকর এই পার্বত্য পথে ভ্রমণ, জীবনের সব ভ্রমণের চেয়ে এক সেরা অধ্যায়, অন্তত আমার কাছে। স্বপ্নেও কখনত্ত ভাবতে পারিনি যে, লেহ লাদাখ বা হিমাচল প্রদেশের দুর্গম পার্বত্য পথে, যার গড় উচ্চতা ১২৫০০ থেকে ১৪৫০০ ফিট, নিজেদের গাড়ীতে, পুত্র ষ্টীয়ারিঙ হুইলে বসে, ভ্রমণ করাতে নিয়ে যেতে পারবে। অসম্ভব ভালোলাগার, এই যাত্রা পথ, সমতল ও কাশ্মীর ও লাদাখের মালভূমির উপত্যকার গিরিপথ হয়ে, চীন সীমান্তের কাছাকাছি প্যাংঙ্গঙ্ হ্রদ, এবং ফিরতি পথে হিমাচল প্রদেশের অভূতপূর্ব ছবির মতন সুন্দর সব উপত্যকা ও গিরিপথ পেরিয়ে, মানালী ও কুলু উপত্যকা, ও শেষে রাজস্থানের আরাবল্লি উপত্যকা হয়ে গুজরাতের আমেদাবাদ এবং সর্বশেষে মহারাষ্ট্রের মুম্বাই ফেরা, প্রায় ৭৫০০ কিলোমিটারের যাত্রা পথ পাড়ি দেওয়া, ছোট্ট অধৃত সহ পরিবারের সকলে একসাথে, নিজেদের গাড়ীতে, আর আমার পুত্র সেই গাড়ীর ড্রাইভিং হুইলে, এই ভ্রমণের মেজাজই আলাদা যেন। যেখানে ভাললাগে দাঁড়িয়ে যাওয়া, সময়ের কোনও পাবন্দি নেই।

    আহা, যাহা দেখিলাম তুলনা তার নাই। আর এর সাথে আমার প্রায় সমগ্র ভারত দর্শনই সমাপ্ত হোল, যার আশি ভাগই আমার চাকরি থেকে অবসর নেবার পরেই এবং সর্বদাই পরিবারের সকলের সাথে।

    মানস কুমার দাস

    আমেদাবাদ, গুজরাত

    ১৮ ই নভেম্বর ২০২৩

    মুম্বাই থেকে ছেলে কৌশিকের ফোন এলো জুলাই এর শেষ সপ্তাহের বিকেলে বাবা তুমি ও মা রেডি থাক ব্যাগ ইত্যাদি গুছিয়ে, আগামী ১৬ই আগস্ট আমরা কাশ্মীর লেহ লাদাখ ট্যুরে বের হব, আমাদের টাটা সাফারী গাড়িতে করে। তোমাদের দুপুরে আমেদাবাদের থেকে পিক আপ করে নেব। মনটা খুব খুশি খুশি হোলো, প্রায় একবছরেরও বেশি সময় পরে আবার এক লম্বা সফর হবে নিজেদের গাড়ি করে। আবার ওই সুদুর হিমালয়ের দুর্গম পথে, স্বচালিত বাহনে যাত্রার কথা চিন্তা করে কিছু যেন ভীতিও হচ্ছিল, তবে কাশ্মীরের স্বর্গীয় সৌন্দর্যের এবং লাদাখের প্যাংগঙ্ লেকের মনোরম দৃশ্য স্বচক্ষে দেখার ভীষণ ইচ্ছেও ছিল। আমার স্ত্রী মিঠুও, খুব ইচ্ছে থাকলেও, যেন একটু দোমনা হয়ে পড়েছিল, লম্বা যাত্রা পথের কথা ভেবেই। শারীরিকভাবে যদিত্ত আমরা দুজনেই ফিট ছিলাম বর্তমানে। আর সবথেকে আকর্ষণ ছিল, আমাদের সুদুর যাত্রাপথে আমাদের সঙ্গী, আমাদের একমাত্র পুত্র কৌশিক, পুত্রবধু রিঙ্কি (অঙ্কিতা) এবং সর্বোপরি সর্বোচ্চ আনন্দের উৎসধারা, আমাদের ছোট্ট সোনা অধৃত, আমাদের পৌত্র, আর সেটাই ছিল সবচেয়ে আকর্ষণীয় সমস্ত সফরের। শুরু হোলো আমাদের প্রস্তুতি। নেট মধ্যমে জানতে পারলাম আমাদের যাত্রাপথের দুরত্ব এবং কাশ্মীর লেহ লাদাখের হিমালয়ের গিরিপথের সুউচ্চ, সংকীর্ণ এবং কিছুবা বিপদসংকুল যাত্রাপথের কিছু বিবরণী। তৎসহ বিভিন্ন সুউচ্চ গিরিপথ বা ঘাট (মাউন্টেন পাস), যার উচ্চতা ১১ হাজার ফিট থেকে প্রায় ১৮৫০০ ফিট পর্য্যন্ত। সুতরাং অক্সিজেনের মাত্রা খুব কম হওয়াই স্বাভাবিক। সেইভাবেই আমরা কতিপয় অক্সিজেন পোর্টেবল সিলিন্ডার ক্যান, কর্পূর এবং কিছু ওষুধ, যেমন ডায়ামক্স, যা সুউচ্চ পার্বত্য পথের কোনোও রকম অসুস্থতার জন্য ব্যবহূত হবে। আর একটি হোমিত্তপ্যাথি ওষুধ কোকা সঙ্গে রাখার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হোলো। তবে যাবার আগে আমেদাবাদে আমাদের ফ্যামিলী ডাক্তার বাবুর সাথে কন্সাল্ট করলে উনি বললেন, যে, যেহেতু আমরা সম্পুর্ন ভ্রমণ স্থলপথেই করছি, আকাশ পথে নয়, তই কোনও রকম ওষুধের প্রয়োজন পড়বেনা, এবং স্বাভাবিক ভাবেই ধীরে ধীরে পার্বত্য উচ্চতার সাথে সাথে শরীর আবহাওয়ার সাথে ধাতস্থ হয়ে যাবে (এক্লেমাটাইসড্)। বেশকিছু ড্রাই ফ্রুটস্, রোজকার প্রয়োজনীয় ব্যবহারের সরন্জাম এবং স্বল্প পোশাক পরিধান সহ আমাদের যাত্রার ব্যাগ প্যাক্ করা হোলো। মুম্বাই এ আমাদের পুত্র ও তার পরিবারও প্রয়োজন অনুযায়ী সব কিছু ব্যবস্থা ইতিমধ্যেই সেরে ফেললো। এরমধ্যে তিন চার বার আমাদের কিউট্ ছোট্ট বন্ধু অধৃতের ফোনও এসে গেলো, ভাইয়া (আমি) মাম্মা (আমার স্ত্রী), তোমরা রেডি হয়েছ তো? স্যাটারডে তে আমরা আমেদাবাদে পৌঁছচ্ছি তোমাদের নিতে, ঠি ক আছে? আর ওই মিষ্টি মিষ্টি কথা শুনে আমরাও সব ভীতি ত্যাগ করে খুব খুশি।

    অবশেষে আমাদের সুদীর্ঘ যাত্রার দিন হাজির হোলো। ৬ই আগস্ট ২০২২ খুব ভোরে, সূর্য্যোদয়ের আগেই মুম্বাই এর খাড়গাড় থেকে আমার পুত্র কৌশিক, পুত্রবধু রিঙ্কি এবং অধৃত কে নিয়ে তার নতুন বাহন ‘টাটা সাফারী’ তে রওনা হোলো আমেদাবাদের উদ্দেশ্যে। দুপুরে এখানে আহার সেরে আমাদের সাথে নিয়ে প্রথম গন্তব্যস্থল হবে রাজস্থানের যোধপুর শহর, যেটি ৪৪৩ কি.মি দুরত্বে অবস্থিত, এবং সেখানে পৌঁছতে রাত্রি প্রায় ৯ টা বা ১০টাই হয়ে যাবে। বেলা ২টো নাগাদ আমার পুত্র তার পরিবার সহ আমেদাবাদে আমাদের গৃহে পৌঁছবার পরে, সবাই দ্বিপ্রহারিক আহার সেরে নিলাম, এবং বেলা ৩টে নাগাদ রওনা হলাম, দুর্গা দুর্গা বলে, যোধপুরের দিকে।পথে জ্বালানি ভরার জন্য কিছুক্ষণ ব্যাতিত হোলো, কারন গাড়ি ততক্ষণে ৫৫০ কি.মি পথ পাড়ি দিয়েছিল মুম্বাই থেকে। ডিজেল ভরার পর গাড়ি ছুটে চললো গান্ধীনগর হয়ে পালানপুরের দিকে। রাস্তা খুবই ভাল, গাড়ির ষ্টীয়ারিং আমার পুত্রের হাতেই। ইতিপুর্বে তার মহারাষ্টের মহাবালেশ্বর, মাথেরান, পঞ্চগণি,

    *****

    কেরালার মুন্নার, কর্নাটকের পশ্চিমঘাট পর্বতমালা, রাজস্থানের মাউন্ট আবু, সহ পুর্বের দার্জিলিং, সিকিমের পাহাড়ী দুর্গম অঞ্চলের গাড়ি চালানোর অভিঞ্জতা আছে। পাপাই (আমার পুত্র) এর প্রতি পুর্ণ আস্থা আমাদের সকালের ছিল।

    পালানপুর পার হবার পরে দুরে পাহাড়ের দৃশ্য গোচর হতে থাকল ধীরে ধীরে, কারন আমরা রাজস্থানের মাউন্ট আবুর দিকে এগিয়ে চলেছি। বিজাপুর বাজারের মধ্যে দিয়ে যাবার সময় রাস্তায় গরুর পাল, গাড়ির গতি কিছু স্লথ করে দিল। ইদার নামক জায়গা পার হবার পরেই, রাস্তার দুই পার্শ্বে শুধু সবুজের সমারোহ দেখতে পেলাম, এবং আরও এগিয়ে যেতেই সামনে রাজস্থানের আরাবল্লী পর্বতমালা দৃশ্যমান হোলো। সম্পুর্ন সবুজে ঢাকা পাহাড় এবং উপত্যকা, এ যেন এক এক অভাবনীয় দৃশ্য। রাজস্থানের রুখা শুখা জমির সেই রূপ যেন কোথায় অদৃশ্য হয়ে গেছে। বর্ষা রাণী বেশ ভালোই কৃপা বর্ষণ করেছেন রাজস্থানের প্রান্তরে। আগে বহুবার রাজস্থানের একমাত্র হিল ষ্টেশন মাউন্ট আবু তে এসেছি, যদিত্ত শীতের সময়, তখন এত সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য দৃশ্যমান হয়নি। কিছু সময় পশ্চাতে, ৬টা২৫মি নাগাদ আমরা ‘আম্বাজী মাতার মন্দির’ পেরিয়ে রাজস্থানের ভূখণ্ডে প্রবেশ করলাম। অপরূপ সবুজ সুন্দর রূপে আবুর সন্নিকটে ‘আরাবল্লী’ পর্বতের শিখরমালা দৃশ্যমান হতে থাকল। কয়েক মিনিটের বিরাম এবং চা খাবার জন্য গাড়ি থেকে বাইরে এসে রাস্তার পাশের চায়ের দোকানে চা খাওয়া হোলো। পথের পাশেই এক সুবৃহৎ অট্টালিকার দাওয়ায় বসে ছ সাত জন স্থানীয় রাজস্থানী মাঝ বয়সী তাঁদের সাদা প্রাদেশিক পোষাক এবং লাল রঙের পাগড়ী পরিহিত পুরুষ, খুব আরামের সাথে গরম চা ও ছিলিম এ টান দিচ্ছিলেন। বেশ ভালই লাগছিল সেই দৃশ্য। তাদের অনুমতি নিয়ে কয়েকটি ফটো নিলাম আমাদের মোবাইল ফোনের ক্যামেরায়। আবার যাত্রা শুরু হোলো, ৭টা ১৩মি নাগাদ পাহাড়ের শিখরে সূর্য্যাস্তের অপূর্ব রক্তিম ছটাদেখে সবাই খুব আনন্দ অনুভব করলাম। আমার ছোট্ট বন্ধু ‘অধৃত’ আমার মোবাইল ক্যামেরায় সেটা আবার সুন্দরভাবে ক্লিক করলো। গাড়িতে চলাকালীনই যোধপুরে হাইওয়ের কাছাকাছি এক হোটেলে ২ টো রুম বুক করা হোলো, রাত্রি অতিবাহিত করার জন্য। রাত্রি প্রায় ১০টা১৫মি নাগাদ আমরা লুনী নদী ওপর সেতু পার হয়ে যোধপুর হোটেলে পৌঁছলাম।তার আগেই রাস্তার পাশে ভাল একটি সুন্দর ধাবায় আমাদের রাতের খাওয়া দাওয়া সেরে নেওয়া হোলো, পাপাই ডাল বাটি চুর্মার অর্ডার দিল। যোধপুরের হোটেল টি বেশ ভালই ছিল, কোনও এক ছোট ফুটবল ষ্টেডিয়ামের সামনে। কিছু দুরে একটি পাহাড় ও দৃশ্যমান ছিল। সবাই তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লাম, কারন পরদিনই ভোরে আবার পাঠানকোটের উদ্দেশ্যে যাত্রা করতে হবে।৭ই আগস্ট সকাল ৭ টা নাগাদ, আমার সকালের প্রাত্যহিক ধ্যান এবং প্রাণায়ম সেরে, স্ত্রীর বানানো ভোরের লিকার চা ও বিস্কুট খাবার পর, আমরা রওনা দিলাম ৮৬৮কিমি দুরে, পাঞ্জাবের পাঠানকোটের উদ্দেশ্যে, ন্যাশানাল হাইওয়ে ৫৮।৫২ ধরে। রাস্তায় গাড়িঘোড়ার সংখ্যা খুব বেশি না থাকায় আমাদের গাড়ি বেশ সাবলীল ভাবেই দ্রুত চলছিল। কিচুক্ষন পর রামদেওরা অতিক্রম করলাম, সেই সত্যজিৎ রায়ের ছবি সোনারকেল্লার রামদেওরা,জয়সালমের জেলার রেল ষ্টেশনের কথা মনে পড়ে গেলো বেশ। রামদেওরা আর ঝুনঝুনর মধ্যবর্তী এলাকার দুপাশেই সবুজের সমারোহ ছিল। এ যেন অন্য রাজস্থান আমার কাছে। রাস্তায় যেতে যেতে দু চারটি ময়ূরের দর্শন ও পাওয়া গেলো। এরপর আমরা চন্ডীগড় রাজ্যে প্রবেশ করলাম এবং হিসারের কাছাকাছি রাত্রি ৮টা১৫মি নাগাদ ‘আসান্দা চাটলিয়া’ নামক স্থান অতিক্রম করে ‘ফতেহপুরের’ দিকে এগিয়ে চললাম। এখানেও সেই মরুভূমি নামে ক্ষ্যাত রাজস্থানের প্রান্তর আর দৃশ্যমান হোলো না, তার বদলে দেখতে পেলাম সম্পুর্ন সুন্দর সবুজ প্রান্তের।

    *****

    সকালের ব্রেকফাস্টের সময় এসে গেলো, ৯টা ১৫মি নাগাদ পথের পাশের এক সুন্দর ধাবায়, নাম ‘মহাদেব ফ্যামিলি ধাবা’র সামনে আমরা গাড়ি পার্ক করে নেমে পড়লাম। ধাবায় নাম মাত্র দু একজনই দেখা গেল। আমরা বাইরে ছোট ছোট নুড়ি পাথর বিছানো লনের চেয়ারে বসে, আলুর পরোটা, আলু পোহা আর চা এবং কফির অর্ডার দিলাম এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাদের টেবিলে সেগুলো সার্ব করা হোলো। অধৃত সেই ফাঁকে কিছুটা ছুটোছুটি করে নিল লম্বা খোলা জায়গায়I

    সামনের হাইওয়ের অপরদিকে দুরে পাহাড় দেখা যাচ্ছিল, মাঝেমধ্যে দুএকটি গাড়ি সবেগে চলে যাওয়া ছাড়া,আরসবই নিস্তব্ধ সুন্দর সকাল। ব্রেকফাস্টের পর আবার পথ চলা শুরু হোলো। রাস্তার দুধারের দৃশ্য খুব সুন্দর, আর আমাদের গাড়ির ভেতরে বেশ আরাম করেই বসা যায়। একদম পিছনের দুটো সীটের একটি ভাঁজ করা, তার ওপর আমাদের ব্যাগ পত্তর রাখা, আর একটি সীট খোলা অধৃতের জন্য, কিন্তু সে বেশিরভাগ সময় ই মাঝের লম্বা সীটে আমার ও তার ‘মাম্মার’ মাঝে থাকতেই বেশি পছন্দের। মোবাইল ফোন হাতে থাকলে চুপচাপ, আর না থাকলেই গাড়ির মধ্যেই হুটোপুটি তার। তবে অধৃত ও খুব বেড়াতে ভালবাসে গাড়ি করে, আর সাথে তার ‘ভIইয়া’ (আমি) ও ‘মাম্মা’ (আমার স্ত্রী) থাকলে সোনায় সোহাগা, আনন্দের সীমা নেই তার। দুপুর ১ টা নাগাদ আমরা পাঞ্জাবে প্রবেশ করলাম, এবং ‘বেহল মোতিপুরা’ নামক স্থান অতিক্রম করলাম। আমি মাঝে মাঝে পথের পার্শ্ববর্তি মাইলস্টোন বা সবুজ সাইনবোর্ডে লেখা জায়গার নাম আমার মোবাইলে লিখে নিচ্ছলাম। সেই দেখেই বুঝলাম আমরা ‘সিরসা’ নামক জায়গা থেকে প্রায় ৯৯কি.মি দুরে রয়েছি। এরপর দুপুরের খাবার জন্য থামাতে হোলো একটি জায়গায়, হাইওয়ের পাশেই বেশ বড় একটি ধাবা, নাম ‘টপ ফ্যামিলি ধাবা’। খাবার অর্ডার দেওয়া হোলো জীরা রইস্ ডাল ফ্রায় আর ভিন্ডি সবজি। একটি থালায় মাঝারি সাতটি বাটিতে রাখা বিভিন্ন ধরনের আচার এবং মাঝখানের বাটিতে ভর্তি মাখন, আমাদের টেবিলে আগে দিয়ে গেলো। সব aআচারের স্বাদই অতি সুন্দর। খাওয়া শেষে আমার ছেলে কৌশিক আবার তার টাটা সাফারী গাড়ি ছোটাল, প্রথমে লুধিয়ানার উদ্দেশ্যে, যা পাঠানকোট যেতে পথে পড়বে। সকালের দিকে সমস্ত পথই প্রায় হালকা কুয়াশা পরিবৃত ছিল, এক অন্যরকম প্রাকৃতিক দৃশ্য, কিছুটা শীতের সকালের মতন। পথের পাশের হরিয়ালী ক্ষেতের তা আরও সুন্দর লাগছিল, যখন চিরোও কালওয়াস নামক জায়গা অতিক্রম করছিলাম। আমরা সন্ধ্যা ৭টা ১৫মি নাগাদ জলন্ধর অতিক্রম করলাম, কিছুটা পথ এক গ্রামের রাস্তার মধ্যে দিয়ে সর্টকাট্ যেতে হোলো, যেভাবে রিঙ্কির হাতে ধরা জি পি এস নির্দশ করছিল। কিন্তু সেই সুযোগে জলন্ধরের গ্রামীণ দৃশ্যও দেখতে পেলাম। সবুজ হারাভারা ক্ষেত, কিছু ট্রাকটার ক্ষেতের মাঝে, কোথাও বা গোল শুকনো ঘাসের কুটির, যেন ছবির মত প্রতিত হচ্ছিল। আর একটি জিনিস আমার ছেলে আমাদের নজরে আনলো, সেটা হোলো বহু গাড়িতেই,

    Enjoying the preview?
    Page 1 of 1