Discover millions of ebooks, audiobooks, and so much more with a free trial

Only $11.99/month after trial. Cancel anytime.

মানুষিকতা
মানুষিকতা
মানুষিকতা
Ebook235 pages1 hour

মানুষিকতা

Rating: 0 out of 5 stars

()

Read preview

About this ebook

২০০৫ সালে ময়মনসিঙহ মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র মেহদি হাসান খান ও তার বন্ধুদের প্রতিষ্ঠান অমিক্রণ ল্যাব অভ্র বাংলা টাইপিং সফটওয়্যারের মাধ্যমে বাংলা ভাষা অনলাইনে উন্মুক্ত করেন। অভ্রর ইউনিকোড শক্তিতে খুলে যায় বাংলা ভাষায় সৃষ্টিশীলতার অবারিত সম্ভবনার দুয়ার। পালে হাওয়া লাগে বাংলা উইকিপিডিয়া সহ বিভিন্ন কমিউনিটি ব্লগ, অনলাইনে বাংলায় যেমন ইচ্ছে নিজেকে প্রকাশের নানা মাধ্যমে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা বাংলাভাষী নানা মানুষের উপস্থিতিতে।

ছোটবেলায় থেকে লেখালেখি করলেও ২০০৬ সালে ইসলামিক প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র থাকা অবস্থায় বাংলা উইকিপিডিয়ায় অবদান রাখার আগ্রহে অনলাইনে ব্যক্তিগত অভ্র টাইপিং এর সূচনা হয়। প্রতিক্রিয়াশীল নই তাই সমাজের অন্যায়, অনাচারের মূল খুঁজে সমাধানের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া আমার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। সমস্যার মূল খুঁজে পেলে তার সম্ভাব্য সমাধানের কথা ভাবা সহজ হয়। সমস্যার স্বরূপ উদঘাটনের না করে প্রতিক্রিয়াশীল ছোট আগাছারূপ সমস্যার দ্রুত সমাধান কখবই স্থায়ী আরোগ্য দেয় না, ক্যান্সারের মতো মাথা চাড়া দেবার সম্ভাবনা থাকে। আপাত দৃষ্টিতে অসম্ভব মনে হলেও সমস্যার গোঁড়া চিন্থিত করে সেখানে আলো জ্বালাবার চেষ্টা করার মাধ্যমে জীবনের অর্থ খুঁজে চলেছি।

লেখালেখির শক্তি পেয়েছি মার কাছ থেকে, বাবার শিক্ষায় পগ্রেসিভ গৌতম বুদ্ধের মতো পাশে থেকেছি নির্যাতিত, নিপীড়িত, সংখ্যালঘু, অধিকারবঞ্চিতের। অবস্থা পরিবর্তনে নিজেকে সঁপে দিয়েছি বিনাদ্বিধায়। এক যুগ আগে ধর্মনিরপেক্ষ ব্লগারদের সাথে প্রথম নামি বিমানবন্দরে লালন মূর্তি ভাঙার প্রতিবাদে। এরপর দাঁড়িয়ে, বসে অর্থাৎ জীবিত থেকে দেখেছি ক্রমান্বয়ে বাংলাদেশের ছিনতাই হয়ে যাওয়া মৌলবাদী শক্তির হাতে।

২০১৩ সালে শাহবাগ আন্দোলন শুরু হবার আগের রাতে প্রকাশিত মানুষিকতা বইটিতে স্থান পেয়েছে ২০০৭ থেকে ২০১৩ সময়ের বিভিন্ন ঘটনা পরম্পরা। ২০১১ সালে অবিশ্বাসের দর্শন বইটির উদ্দেশ্য ছিল বিজ্ঞানমনষ্ক কৌতূহলী মানুষের মনের সকল প্রশ্নের উত্তর খোরাক যোগাবার চেষ্টা। ২০১২ সালে সর্বাধিক বিক্রিত হবার খবরে বুঝতে পারি পাঠকের ভালোবেসে আলিঙ্গন। সমাজ পরিবর্তনের জন্য লেখালেখি করি। ২০১৩ সালে তাই প্রকাশ করি মানুষিকতা; উদ্দেশ্য ব্যক্তিজীবনের বিভিন্ন উদাহরণের মাধ্যমে মানুষ হিসেবে আমাদের বৈশিষ্ট্যের কথা, কেনও আমরা যৌক্তিক, আবেগী, দার্শনিক বা জঙ্গি হতে পারি। আয়নার সামনে নিজেকে রেখে আশারাফুল মাখলুকাতের সাথে নিজেকে তুলনা করে বের করেছি নিজের সীমাবদ্ধতা। মানবতাবাদী, যুক্তিবাদী জীবনে সে সীমাবদ্ধতার জ্ঞান সবসময় সাহয্য করেছে স্বাধীন ভাবে হাত ও মস্তিষ্ক চর্চার মাধ্যমে সুখ, ভালোবাসা, আনন্দ, দুখবেদনার জীবন কাটাতে।

২০১৫ সালে শুদ্ধস্বর আনসার বাংলার চাপাতি আক্রমণের ভাই, সহ লেখক, প্রকাশক, বন্ধু হারিয়ে বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিত হয়েছি বছর পাঁচেক। জার্গৃতি প্রকাশনী অবিশ্বাসের দর্শনের তৃতীয় সংস্করণের পাশাপাশি মানুষিকতা বইটির জাগৃতি সংস্করণ প্রকাশের স্বত্বচুক্তি করেছিলো। কর্নধার ফয়সাল আরেফিন দীপন ২০১৫ সালে নিজের অফিসে আনসার বাংলার চাপাতির আঘাতে নির্মম ভাবে নিহত হবার পর থেকে মানুষিকতা বইটি দুষ্প্রাপ্য। ২০১৪ সালে বইদ্বীপ প্রকাশনী মানুষিকতা বইটির ইবুক সংস্করণ বের করে। মুক্তমনা লেখক, ব্লগাররা আক্রান্ত হলে নিরাপত্তার সার্থে বইদ্বীপের মুল সাইট থেকে মানুষিকতা সরিয়ে ফেললেও তাদের ইবুক ভার্সনটি গু-প্লে স্টোরে রয়েছে।

মানুষিকতা বইটির পরিমার্জিত দ্বিতীয় সংস্করণ এর ডিজিটাল সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে সোফির জগত প্রকাশনী থেকে। পড়া যাবে আইবুক, কিন্ডেল সহ যেকোনো ডিজিটাল মাধ্যমে।

সবশেষে পাঠককে ধন্যবাদ ভালোবেসে এতদিন পাশে থাকার জন্য। আমাদের জীবন দীপান্বিত হোক।

LanguageBengali
PublisherDraft2Digital
Release dateMay 3, 2023
ISBN9781393374961
মানুষিকতা
Author

Raihan রায়হান Abit আবীর

জন্মেছি ঢাকায়, ১৯৮৬ সালে। বিজ্ঞানমনস্ক যুক্তিবাদী সমাজের স্বপ্ন দেখি। মুক্তমনা সম্পাদক অভিজিৎ রায়ের অনুপ্রেরণায় মুক্তমনা বাংলা ব্লগে বিজ্ঞান, সংশয়বাদ সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লেখা শুরু করি এবং ২০১১ সালে তার সাথে মিলে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় শুদ্ধস্বর থেকে প্রকাশিত হয় প্রথম বই ‘অবিশ্বাসের দর্শন’। দ্বিতীয় বই ‘মানুষিকতা’ প্রকাশিত হয় একই প্রকাশনী থেকে ২০১৩ সালে। 

Reviews for মানুষিকতা

Rating: 0 out of 5 stars
0 ratings

0 ratings0 reviews

What did you think?

Tap to rate

Review must be at least 10 words

    Book preview

    মানুষিকতা - Raihan রায়হান Abit আবীর

    মানুষিকতা

    রায়হান আবীর

    ––––––––

    E book published by Sophie’s World Publication

    মানুষিকতা । রায়হান আবীর

    © লেখক

    প্রথম প্রকাশ ফেব্রুয়ারি ২০১৩

    প্রকাশক শুদ্ধস্বর

    ৯১ আজিজ সুপার মার্কেট (৩য় তলা), শাহবাগ, ঢাকা

    ৯৬৬৬২৪৭, ০১৭১৬৫২৫৯৩৯

    shuddhashar@gmail.com

    www.shuddhashar.com

    প্রচ্ছদ সামিয়া হোসেন

    by Raihan Abir.

    A publication of Shuddhashar

    First edition February 2013

    ––––––––

    এই বইটি অভ্রতে কম্পোজকৃত

    উৎসর্গ

    ডগলাস অ্যাডামস

    প্রশ্ন: তার মতো কল্পনাশক্তি অর্জনের জন্য ঈশ্বরকে কতবার জন্ম নিতে হবে?

    উত্তর: কত পথ পাড়ি দিলে একটি মানুষ...

    মানুষ বলে ডাকবে তাকে?

    একদার অন্ধকারে ধর্ম এনে দিয়েছিল আলো,

    আজ তার কংকালের হাড় আর পঁচা মাংসগুলো

    ফেরি কোরে ফেরে কিছু স্বার্থাণ্বেষী ফাউল মানুষ-

    সৃষ্টির অজানা অংশ পূর্ণ করে গালগল্প দিয়ে।

    আফিম তবুও ভালো, ধর্ম সে তো হেমলক বিষ।

    ইহকাল ভুলে যারা পরকালে মত্ত হয়ে আছে

    চলে যাক সব পরপারে বেহেস্তে তাদের

    আমরা থাকবো এই পৃথিবীর মাটি জলে নীলে,

    দ্বন্দ্বময় সভ্যতার গতিশীল স্রোতের ধারায়

    আগামীর স্বপ্নে মুগ্ধ বুনে যাবো সমতার বীজ

    রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ ( ১৯৫৬-১৯৯১)

    ভূমিকা

    আমরা আমাদের বিশ্বকে তাৎপর্যমণ্ডিত করি আমাদের উত্থাপিত প্রশ্নসমূহের সাহসিকতা আর তাদের উত্তরের গভীরতা দিয়ে।

    উক্তিটি করেছিলেন জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও সুবিখ্যাত বিজ্ঞান লেখক কার্ল স্যাগান। বলা যেতে পারে, এটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ একটা উক্তি; কেননা সুদূর অতীতের গুহাবাসী মানব থেকে শুরু করে মঙ্গলে মহাকাশযান পাঠানো এই সময়ের মানুষের আধুনিক সভ্যতার পেছনে যে অপরিসীম শ্রম ও নিষ্ঠা কাজ করছে - তার পেছনে রয়েছে জীবন ও জগতকে জানবার অবিরাম,অক্লান্ত প্রচেষ্টা। এই প্রচেষ্টা কোন দৈব জ্ঞানে পাওয়া নয়। আদিম মানুষ প্রথম আগুন জ্বালানোর মাধ্যমে মনের অজান্তেই যুক্তিশাসিত রসায়নের ভিত্তি তৈরি করে নিয়েছিল,কিংবা হাতিয়ারের গড়া আর প্রয়োগের মাধ্যমে বেখেয়ালেই তৈরি করেছিল স্থিতিবিজ্ঞানের ভিত্তিভূমি- তখন সেখানে কাজ করেছিল মানুষের গভীর পর্যবেক্ষণশক্তি আর একনিষ্ঠতা- যার কথাই বলেছেন কার্ল স্যাগান। মানুষের এই পর্যবেক্ষণশক্তিই অন্যসকল প্রাণী থেকে মানুষকে গড়ে দিয়েছে আলাদাভাবে।

    একে একে পালাবদল ঘটেছে মানব ইতিহাসের নাট্যমঞ্চে। অসহায় মানুষ যখন ভাবল, পশুবধের যে প্রকৌশল পশুর ওপর কার্যকর হয়েছে- তা দিয়েই বশে আনা যাবে প্রকৃতিকে। প্রকৌশলের সেই সীমাবদ্ধতা পূরণের জন্যে উদ্ভাবিত হলো জাদু, গোষ্ঠীভিত্তিক মানুষেরা বানালো টোটেম। এভাবেই শুরু হলো বিশ্বাসের পদযাত্রা। সে বিশ্বাস ক্ষতিকর ছিল না, কেননা তা প্রকৌশলের স্থান দখল করে নি। বিশ্ব সম্পর্কে সম্যক ধারণার সাথে সাথে চলতে থাকে বিশ্বাসের পদযাত্রা এবং তারপর আরও ভাঙ্গাগড়ায় আসে ধর্ম- যা কী না বর্তমানে মানব সভ্যতার অন্যতম অসাড় প্রতিষ্ঠান। মানুষের এই পথচলার বিবর্তনে যেখানে প্রশ্ন উত্থাপন আর তার নিমিত্তে গভীর অনুসন্ধান হওয়ার কথা ছিল- সেখানে পদে পদে এই প্রতিষ্ঠানটি শিখিয়েছি প্রমানহীন অন্ধ-বিশ্বাসের তরিকা। জেডি বার্নাল তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘ইতিহাসে বিজ্ঞান’- এ বলেছিলেন- ‘সম্পূর্ণ যুক্তিশাসিত এবং ব্যবহারযোগ্য বিজ্ঞান তখনই গড়ে ওঠে যখন পরিবেশের একাংশের অভ্যন্তরীণ প্রতিক্রিয়াগুলো সম্পর্কে অন্তত সেইটুকু জ্ঞান লাভ করার আশা থাকে, যার বলে মানুষ ইচ্ছেমত তাকে কাজে লাগাতে পারবে’ এবং আমরা বলতে পারি, উল্লিখিত সেইসব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সবচেয়ে নিখুঁতভাবে বর্ণনা দেয়ার সাথে বিরোধ আছে বিশ্বাসের, ধর্মীয় বিশ্বাসের। ধর্মীয় বিশ্বাস কোন যৌক্তিক পথ না সেইসব ঘটনাকে অনুধাবন করার, কিংবা স্যাগানের ভাষায় বলা যায়- উত্তরের গভীরতা দেয়ার জন্যে সেই বিশ্বাস জোর দেয় না। সেই বিশ্বাস শুধু প্রশস্তি জোগাতে এবং জাগাতে পারে, যা অসাধারণ ক্ষমতাধর মানুষের মননশীলতার পক্ষে করুণাউদ্রেককারী দান ছাড়া কিছুই নয়। আদিম মানুষের জাদুবিশ্বাস ভ্রান্ত ছিল ঠিকই, কিন্তু তা মানুষকে খুব একটা ক্ষতি করত পারে নি। কিন্তু এই সময়ে ধর্মবিশ্বাস চরম ক্ষতিকর, কারণ সে নানা ধরণের বেশ ধরতে জানে এবং তার সবচেয়ে প্রিয় পোশাকটির নাম ‘ছদ্মবিজ্ঞান’। ধর্মব্যবসায়ীরাও জানে, বিজ্ঞান ছাড়া তাদের কথার গ্রহণযোগ্যতা শূন্যের কোঠায়, তাই উদ্ভব হয়েছে জাকির নায়েকের মতো ধর্মব্যবসায়ীরা এবং পরিহাস এই যে- প্রযুক্তির কল্যাণেই তা আজ জনপ্রিয়। মানুষ সুখে থাকতে পারছে এই ভেবে যে, তাদের বিশ্বাস এবং বিজ্ঞান নামের প্রতিষ্ঠানটির মধ্যে কোন বিরোধ নেই! এটা ভয়াবহ, কেননা বিজ্ঞান অপরিবর্তনীয় নয়, কিন্তু ধর্ম অপরিবর্তনীয়। আইজ্যাক নিউটনের যুগে জাকির নায়েক জন্মালে তিনি কোরানকে ব্যাখ্যা করতেন নিউটনের আলোকেই। অথচ এ কথাও সত্য- ‘আইনস্টাইন শুধু এজন্যেই সম্মানিত নন যে, তিনি বিজ্ঞানে মৌলিক অবদান রেখেছেন। এজন্যেও সম্মানিত যে, তিনি নিউটনের কিছু ত্রুটি ধরিয়ে দিয়েছেন’। ধর্মীয় বিশ্বাসের ত্রুটি ধরার কোন সুযোগ কি রেখেছেন মহান ঈশ্বর? এখানেই বিজ্ঞান আর ধর্মীয় বিশ্বাসের পার্থক্য ফুটে ওঠে। প্রশ্নের আঘাতে জর্জরিত করার চেয়ে বিশ্বাস করাকেই ধর্ম গ্রহণযোগ্য মনে করে এবং সেই জন্যে ফাঁদা হয়েছে অসংখ্য গালগল্প, বেহেশত, দোজখ আর শরাবন তহুরার লোভ কিংবা ভয় ভীতির উপাখ্যান।

    ধর্মীয় বিশ্বাস তার উপযোগিতা হারিয়েছে সেদিনই, যেদিন মানুষ জানতে পেরেছে সূর্য নয় বরঞ্চ পৃথিবীই সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘোরে, সে নিজে আশরাফুল মাখলুকাত নয়, তারজন্য সৃষ্টি করা হয় নি এ মহাবিশ্ব, তার উপকারের জন্য সৃষ্টি করা হয়নি প্রানীজগতের। বিবর্তনের ধাপে ধাপে আজকের এই অবস্থানে এসে পৌঁছেছে এই মানুষ এবং এ জ্ঞান যেকোনো ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে প্রবলভাবে সংঘাতপূর্ণ। সে জন্যে বরাবরই ধর্ম রুখে দাঁড়িয়েছে বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে, সত্যকে জানার বিরুদ্ধে- মধ্যযুগে যার উদাহরণ অজস্র এবং এই আধুনিক যুগেও যার উদাহরণ নেহাত কম নয়। ধর্ম এখনো নিয়ন্ত্রণ করছে মানুষকে, মানুষ বন্য-বর্বর-সভ্য যুগে এসে উৎকর্ষের এই ধারাকে অস্বীকার করে পতনসম্পর্কিত গালগল্পে বিশ্বাস করার জন্যে মরিয়া হয়ে উঠছে। এতই মরিয়া যে তারা চোখ বন্ধ করে বহুতল ভবনের পেট চিরে ঢুকে পড়তেও দ্বিধাবোধ করছে না- এতই দৃঢ় তাদের অন্ধ বিশ্বাস।

    বিজ্ঞানলেখক রায়হান আবীর তার এই বইয়ে বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেখাতে চেয়েছেন মানুষের বিশ্বাসের আদি এবং আসল রূপটি। কেন মানুষ বিশ্বাস করে, তার পেছনের সাংস্কৃতিক আর বৈজ্ঞানিক কারণটি কী। কেন এবং কীভাবে ধর্ম এবং ধর্মীয় বিশ্বাস এই শতাব্দীতে এসেও নিয়ন্ত্রণ করছে মানুষের মনন সেই প্রশ্নের উত্তর হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে এই বইয়ে।  ধর্মানুসারীদের ঈশ্বর বিশ্বাস অলৌকিক হলেও তাদের চিন্তা করার প্রক্রিয়া এবং তার সামাজিক ঘাত-প্রতিঘাত যে সম্পূর্ণই লৌকিক এবং বিজ্ঞানের সাহায্যেই তা ব্যাখ্যা করা যায়- সেই বিশ্লেষণগুলোই এই বইয়ের বিবেচ্য বিষয়। মুক্তমনা সম্পাদক অভিজিৎ রায়ের সাথে লিখিত ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ বইটির মূল আলোচ্য বিষয় ছিলো মানব মনকে চিরকাল আন্দোলিত করা নানা প্রান্তিক প্রশ্নের বৈজ্ঞানিক উত্তর সন্ধান। একই সাথে বইটিতে ফুটে উঠেছিলো ধর্মীয় বিভিন্ন বিশ্বাসের অসাড়তা, যৌক্তিক সীমাবদ্ধতার কথাও। এই বইয়ে সেই সূত্র ধরেই রায়হান আবীর আরও গভীরে গিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন বিশ্বাসের স্বরূপ, কেনো মানুষ প্রমানহীন বিষয়ে বিশ্বাস করে, বিশ্বাসের নানা অকার্যকর দিক আর আমাদের দৈনন্দিন জীবনের খুঁটিনাটি ব্যাপারে কীভাবে আমরা চেতন কিংবা অবচেতন ভাবে প্রতিনিয়ত নিয়ন্ত্রিত হচ্ছি নানা ধরনের বিশ্বাস দ্বারা।

    বিশ্বাস আজ এক মহামারীর নাম। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে, যখন মানুষ তীব্রভাবে এগিয়ে যাচ্ছে জ্ঞান-বিজ্ঞানের নতুন সব দ্বার উন্মোচন করতে, আমাদের প্রিয় স্বদেশ সেখানে যাত্রা করছে অন্ধকারের দিকে। সহনশীলতা- যা কী না আমরা সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার হিশেবে পেয়েছিলাম আমাদের পূর্বপুরুষ লালন কিংবা চণ্ডীদাসের কাছে থেকে- সেই সহনশীলতা ভুলে আমরা ঝাঁপিয়ে পড়ছি মন্দিরে মন্দিরে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বৌদ্ধ বিহারে হামলার ঘটনার পেছনেও রয়েছে ধর্মীয় বিশ্বাসের রাজনৈতিক ব্যবহার। মুক্তির অন্বেষা যেখানে হওয়ার কথা নির্ভীক, সেখানে বাধ্য করা হচ্ছে বিশ্বাসে বিশ্বাসী হতে। হুমায়ুন আজাদের ভাষায়, ‘শয়তান এখন আরও ভয়ংকর, কারণ সে রাজনীতি করতে শিখেছে’। শয়তান শুধু রাজনীতি করছে না, সে হয়ে উঠছে ঈশ্বরের মতো ক্ষমতাবান। এই রাজনীতির নাম বিশ্বাসের রাজনীতি, এর সেনারা সব বিশ্বাসী অন্ধ। সেই বিশ্বাসের গোঁড়ায় এক তুমুল আঘাত দরকার, দরকার বিজ্ঞান চেতনার ব্যাপক প্রসারণ। মানুষ এখন আর প্রকৃতির দাস নয়, মানুষ এখন প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এই বইটা হয়ে উঠতে পারে সেই চেতনা প্রসারণের নিয়ামক। আহমেদ শরীফ বলেছিলেন- ‘মানুষ মাত্রই শান্তি ও কল্যাণকামী। কিন্তু শান্তি ও কল্যাণের পথ চেনা নেই বলেই তারা শান্তির নামে ঘটায় অশান্তি, কল্যাণ কামনায় ডেকে আনে অকল্যাণ; প্রীতির নামে জাগায় গোষ্ঠীচেতনা। বিজ্ঞানচেতনার ব্যাপক প্রসার, মুক্তিচিন্তার চর্চাই পারে সেই কল্যাণের পথকে সুগম করতে, সেই পথের প্রয়াসেই এই বইটি।

    মুক্তচিন্তার জয় হোক।

    শফিউল জয়

    ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়।

    সূচী

    প্রথম অধ্যায়

    ঝুঁকি নিয়ে ঝুঁকি নেওয়া

    দ্বিতীয় অধ্যায়

    মানুষের মতো মন

    তৃতীয় অধ্যায়

    বাঙালির মতো মন

    যাদের কাছে ঋণী

    প্রথম অধ্যায়

    ঝুঁকি নিয়ে ঝুঁকি নেওয়া

    অন্ধকারের উপর লাঠিপেটা করে লাভ নেই, আলোক জ্বালালেই অন্ধকার দূর হবে- মোতাহের হোসেন চৌধুরী

    বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে ওঠার পর প্রথম দুই বছর মিরপুর থেকে গাজিপুরে যাওয়া আসা করতাম দুলদুল পরিবহনে দুলে দুলে, ঝুলে ঝুলে কিংবা বসে বসে। একবার সে বাসে উঠলে জীবন থেকে হারিয়ে যেতো দুই ঘন্টা, কখনও তিন ঘন্টা হারালেও অবাক হতাম না। দুই বছর এমনভাবে চলার পর যখন সহ্যের সীমা অতিক্রম করে গেলাম তখন ঢাকা যাবার প্রয়োজন হলে, দুলদুল পরিবহনের পরিবর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্কিং এ থাকা গাড়িগুলোর দিকে তাকাতাম- পরিচিত কারও গাড়িতে বেড়িবাধ ধরে আরাম করে আধঘন্টায় বাসায় পৌঁছানোর আশায়।

    তৃতীয় বর্ষে থাকাকালীন এমনই এক বুধবার ঘুম থেকে উঠে গাড়ির খোঁজ শুরু করলাম। হতাশ হতে হলো। কোথাও কেউ নেই,অর্থাৎ দুলে দুলে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই, এই নিয়তি মেনে নিয়ে বিষণ্ণ বদনে নিজ কক্ষে ফিরে এলাম। এমন সময় রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাস থেকে কলেজ সহপাঠীর ফোন। মোটরসাইকেল হাঁকিয়ে তিনি ঢাকা যাবেন, চাইলে সঙ্গী হতে পারি আমিও। ইতস্তত করলেও যাত্রাপথে নষ্ট করা সময়ের মূল্য বিবেচনায় রাজি হয়ে গেলাম। মোটরসাইকেল নামক বাহনটায় চড়েছি হাতে গোনা কয়েকবার,তাও ছোটবেলায় মামার সাথে। যন্ত্রটা দেখলেই আমার ভয়

    Enjoying the preview?
    Page 1 of 1