মু’মিনের রোযা / Muminer Roja (Bengali)
()
About this ebook
ইসলাম অর্থ আত্মসমর্পণ। আল্লাহ তা‘আলার অভিপ্রায় বা তাঁর ইচ্ছা নির্দ্বিধায় মেনে নেয়াই হচ্ছে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ। রোযা অতি উচ্চমানের একটি ইবাদাত এবং ইহা আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। পুস্তকটিতে কুরআনুল কারীমে রোযার বিধান ও তার সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা, রোযা রেখে তাকওয়া ও আত্মশুদ্ধি লাভ, আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য লাভের উপায়, রমযানে কুরআনের হক আদায় এবং ঈদুল ফিতর সঠিকভাবে উদ্যাপনের বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করা হয়েছে। সুহৃদ পাঠকমহল পুস্তকটি অধ্যয়নে সামান্য উপকৃত হলেও শ্রম সার্থক মনে করবো এবং কোনো ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দিলে কৃতজ্ঞ থাকবো।
Related categories
Reviews for মু’মিনের রোযা / Muminer Roja (Bengali)
0 ratings0 reviews
Book preview
মু’মিনের রোযা / Muminer Roja (Bengali) - মোঃ আবদুল কাদের Md. Abdul Kader
ভূমিকা
ইসলাম অর্থ আত্মসমর্পণ। আল্লাহ তা‘আলার অভিপ্রায় বা তাঁর ইচ্ছা নির্দ্বিধায় মেনে নেয়াই হচ্ছে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ। রোযা অতি উচ্চমানের একটি ইবাদাত এবং ইহা আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
রোযার বিষয়ে অনেকে অনেক কিতাব রচনা করেছেন বিধায় সুহৃদ বন্ধুরা এ বিষয়ে কিছু লেখা থেকে বিরত থাকারই পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু রোযার বিষয়ে বেশ কিছু কিতাব অধ্যয়নের ফলে আমার মনে হয়েছে যে, রোযার শিক্ষণীয় বিষয়সমূহ নিয়ে আরো আলোচনার অবকাশ রয়েছে। তাই এ লেখার আয়োজন।
পুস্তকটিতে কুরআনুল কারীমে রোযার বিধান ও তার সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা, রোযা রেখে তাকওয়া ও আত্মশুদ্ধি লাভ, আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য লাভের উপায়, রমযানে কুরআনের হক আদায় এবং ঈদুল ফিতর সঠিকভাবে উদ্যাপনের বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করা হয়েছে। সুহৃদ পাঠকমহল পুস্তকটি অধ্যয়নে সামান্য উপকৃত হলেও শ্রম সার্থক মনে করবো এবং কোনো ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দিলে কৃতজ্ঞ থাকবো।
প্রস্তকটি লেখা ও প্রকাশনার ক্ষেত্রে যে সকল বন্ধু ও শুভানুধ্যায়ী বিভিন্ন তথ্য ও বই-পুস্তক দিয়ে সহযোগিতা করেছেন, তাদের সকলকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। শ্রুতলিপি ও প্রুফ দেখার কাজে আমার সহধর্মিণী ও দু’মেয়ের সহযোগিতায় বেশ উপকৃত হয়েছি। তাদের জন্য রইল শুভাশিস।
বন্ধুপ্রতিম প্রখ্যাত গবেষক, লেখক ও শিক্ষাবিদ জনাব মো: নূরুল ইসলাম এবং বিশিষ্ট কলামিস্ট ও প্রাবন্ধিক অধ্যাপক মিজানুর রহমান-এর স্বত্ব:স্ফূর্ত সহযোগিতায় বইটি দ্রুত আলোর মুখ দেখতে পেয়েছে। আহসান পাবলিকেশন-এর মালিক ও তাঁর সহকর্মীবৃন্দ অত্যন্ত যত্নের সাথে প্রয়োজনীয় সংশোধন ও মান নিয়ন্ত্রণ করে বইটি প্রকাশ করেছেন। আল্লাহ তাদের সকলকে উত্তম পুরস্কার দান করুন।
বইটি নির্ভুল ছাপানোর শত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কিছু ভুল-ত্রুটি পরিলক্ষিত হওয়া স্বাভাবিক। সহৃদয় পাঠক তা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন বলে আশা করি।
মো: আবদুল কাদের
উপ-পরিচালক (অব.)
তূরে সীনা, রূপাতলী হাউজিং, বরিশাল।
কুরআনুল কারীমে রোযার বিধান
ইসলামের ভিত্তি কালেমা (ঈমান), নামায, যাকাত, রোযা ও হজ্ব। তাই রোযা ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। ইহা একটি ব্যতিক্রমধর্মী ও তাৎপর্যমণ্ডিত ইবাদাত। কারণ, রোযায় উপবাস পালনের সাথে সাথে আমরা আত্মশুদ্ধি, আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য লাভ ও কুরআনের হক আদায়ের গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচী পালন করে থাকি। আমাদের পবিত্র ও সৎকর্মময় জীবন গড়ার নিয়ামক হিসেবে রোযার মাস বিশেষ প্রশিক্ষণের মাস হিসেবে মুসলিম জাহানে সমাদৃত।
ইসলামে যাবতীয় হুকুম আহকামের উৎস হচ্ছে আল-কুরআন। রোযার বিধান ও আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে হাকীমে অবতীর্ণ করেছেন। সূরা বাকারার ১৮৩ থেকে ১৮৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা রোযা সম্পর্কে যে সকল বিধান নাযিল করেছেন তা নিম্নে পেশ করা হলো।
সূরা বাকারা-আয়াত নং ১৮৩ :
يَاَيُّهَا الَّذِيْنَ امَنُوْا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ.
অর্থ : হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হলো, যেমন করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যেন তোমরা মুত্তাকী হতে পারো।
সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা
হিজরী দ্বিতীয় সনে মদিনায় মু’মিনদের উপর আল্লাহ তা‘আলা রোযা ফরয করেন। নিয়তসহ দিনের প্রারম্ভ ‘সুব্হে সাদেক’ থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও কামাচার বর্জন করে আল্লাহমুখী হয়ে চলার নামই রোযা। ‘সুব্হে-সাদেক’ শুরুর পূর্বে কিছু খেয়ে নেয়াকে সিহরী খাওয়া এবং সূর্যাস্তের সাথে সাথে কিছু খেয়ে রোযা ভংগ করাকে ইফতারী করা বলে।
সওম অর্থ বিরত থাকা। এ জন্যই রোযা রেখে পানাহার ও কামাচার বর্জন করার সাথে সাথে রোযাদারকে সকল প্রকার পাপকর্ম, অন্যায় ও অসঙ্গত কথা-বার্তা এবং আচার-আচরণ থেকেও বিরত থাকতে হয়।
রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেন,
مَنْ لَّمْ يَدَعْ قَوْلَ الزُّوْرِ والْعَمَلَ بِهِ فَلَيْسَ لِلّهِ حَاجَةٌ اَنْ يَّدَعَ طَعَامَهُ وَشَرَبَهُ.
অর্থ : রোযা রেখেও যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও তদনুযায়ী কাজ করা পরিত্যাগ করল না, তার শুধু খাদ্য ও পানীয় পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই। (বুখারী)
আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে অবহিত করেছেন যে, পূর্ববর্তী নবীগণের উম্মতের উপরও রোযা ফরয ছিল। এ কথা দ্বারা যেমন রোযার গুরুত্ব বুঝানো হয়েছে তেমনি এ কষ্টসাধ্য ইবাদাতকে আমাদের জন্য মনস্তাত্বিকভাবে সহজও করে দেয়া হয়েছে। অবশ্য তাদের জন্য নির্ধারিত রোযার সংখ্যা, মাস, সময়সীমা ও রোযা পালন পদ্ধতি হয়তো আমাদের শরীয়ত থেকে ভিন্ন ছিল।
রোযা ফরয করার উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন : ‘সম্ভবত: এর ফলে তোমরা তাকওয়ার গুণ অর্জন করতে পারবে বা মুত্তাকী হতে পারবে’। মহান আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করে তাঁর নিষিদ্ধ কাজ থেকে ফিরে থাকা ও তাঁর সন্তুষ্টি লাভের জন্য পছন্দনীয় কাজ করার গুণকেই বলা হয় তাকওয়া। একনিষ্ঠভাবে দীর্ঘ ৩০ দিন রোযা পালন করলে আমাদের মাঝে অবশ্যই তাকওয়ার গুণ অর্জিত হবে।
সূরা বাকারা-আয়াত নং-১৮৪ :
اَيَّامًا مَّعْدُوْدتٍ ط فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ مَّرِيْضًا اَوْعَلى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ اَيَّامٍ اُخَرَ ط وَعَلَى الَّذِيْنَ يُطيْقُوْنَه فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِيْنٍ ط فَمَنْ تَطَوَّعَ خَيْرًا فَهُوَ خَيْرٌ لَّه ط وَاَنْ تَصُوْمُوْا خَيْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ.
অর্থ : সিয়াম নির্দিষ্ট কয়েক দিনের। তোমাদের মধ্যে কেউ পীড়িত হলে বা সফরে থাকলে অন্য সময় এ সংখ্যা পূরণ করে নিতে হবে। ইহা যাদেরকে অতিশয় কষ্ট দেয় তাদের কর্তব্য এর পরিবর্তে একজন অভাবগ্রস্তকে খাদ্য দান করা। যদি কেউ স্বত:স্ফূর্তভাবে সৎকাজ করে তবে তা তার পক্ষে অধিক কল্যাণকর। আর সিয়াম পালন করাই তোমাদের জন্য অধিকতর কল্যাণপ্রসূ যদি তোমরা জানতে।
সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা
রোযা একটানা একমাস ব্যাপী কষ্ট-ক্লেশসাধ্য একটি ইবাদাত। রুগ্ন ও মুসাফিরের (ভ্রমণকারী) পক্ষে রোযা রাখা খুবই কষ্টকর। এজন্য আল্লাহ তা‘আলা রোগাক্রান্ত ও শরীয়তের বিধান মোতাবেক মুসাফিরের জন্য রোযা কাযা করার বিধান দিয়েছেন। রুগ্ন ব্যক্তি সুস্থ হবার পর এবং মুসাফির বাড়ি ফেরার পর যে ক’টি রোযা ভংগ হয়েছে তা রমযানের পর গুনে গুনে পালন করবে। আর যে সকল অতিশয় বৃদ্ধ ও চিররুগ্ন ব্যক্তি রোযা রাখতে অক্ষম তাদের জন্য শরীয়ত ফিদ্ইয়ার বিধান জারী করেছে। একটি রোযার ফিদ্ইয়া অর্ধ সা’ (এক সের সাড়ে বার ছটাক) গম অথবা তার মূল্য। তা কোন মিসকীনকে দান করলে অথবা দু’ বেলা খাদ্য দান করলে ফ্দিইয়া আদায় হয়ে যায়।
অন্যান্য বিধানের মতো রোযার বিধানও ক্রমান্বয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম বছর রোযা রাখতে সমর্থ সুস্থ ব্যক্তির জন্যও ফিদ্ইয়ার ব্যবস্থা চালু ছিল, কিন্তু পরবর্তী বছর সূরা বাকারার ১৮৫ নং আয়াত নাযিল হলে সে বিধান রহিত হয়ে যায়।
সূরা বাকারা-আয়াত নং-১৮৫ :
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِىْ اُنْزِلَ فِيْهِ الْقُرْانُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنتٍ مِّنَ الْهُدى وَالْفُرْقَانِ ج فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ ط وَمَنْ كَانَ مَرِيْضًا اَوْ عَلى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ